যে কোনো দিন মেট্রোরেল চালু, চলবে ১০ মিনিট পর পর

যাত্রী নিয়ে ছুটে চলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত মেট্রোরেল। এখন শুধু দিন গণনা। ক্ষণ ঠিক না হলেও চলতি মাসের যেকোনো সময় বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে মেট্রোরেল। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি দশ মিনিট পর পর চলবে মেট্রোরেল। যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাপ কমিয়ে ১০ মিনিট থেকে তিন মিনিটে নামিয়ে আনা হবে।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাজিপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, আগারগাঁও স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টেশনের কাজই প্রায় শেষ। ছুটির দিনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের না পাওয়া গেলেও কাজিপাড়া ও শ্যওড়াপাড়া স্টেশনে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, কিছু কাজ এখনও বাকি। এসব কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য দিন রাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা।

এদিকে আগারগাঁও স্টেশন পুরোপুরি প্রস্তুত। এখানকার প্রশস্ত ফুটপাত আর সড়কের মাঝে মাঝে রোপণ করা গাছপালা পরিবেশে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. বশির বলেন, ‘টানা তিন বছর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমাদের। সারাদিন জ্যামে রাতে কাজের শব্দে ঠিকমত ঘুমানো যেতো না। এখন পুরো এলাকা বিদেশ বিদেশ লাগছে। এখানকার মনোরম পরিবেশ দেখতে কেউ কেউ ঘুরতেও আসেন।

আরো পড়ুন:
শৈলকুপায় ছাত্র লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত 
বিশ্ববাজারে এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন জ্বালানি তেল দাম

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র মতে, প্রাথমিক ভাবে উত্তরা থেকে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার রেলপথ মেট্রোর জন্য ওপেন করা হবে। এই পথে থাকবে নয়টি স্টেশন। উত্তরা উত্তর হবে মেট্রোর প্রথম স্টেশন। এরপরের স্টেশন উত্তরা সেন্টার, তারপর উত্তরা দক্ষিণ, এরপর পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজিপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া এবং সবশেষ স্টেশন আগারগাঁও।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, সবগুলো স্টেশনই প্রস্তুত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে প্রথমে দশটি মেট্রো ট্রেন যাত্রী পরিবহন করবে এবং প্রতি দশ মিনিট পর পর ট্রেন স্টেশনে আসবে। যাত্রীরা উঠলেই আবার ছুটবে। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সময় জানানো হলে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশের বেশি। এই পথে সাতটি স্টেশন পরবে। সে অনুযায়ী, আগারগাঁও স্টেশনের পর মেট্রোরেলের দশ নম্বর স্টেশন হবে বিজয় স্মরণী।

আরো পড়ুন:
শৈলকুপায় ছাত্র লীগের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত 
বিশ্ববাজারে এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন জ্বালানি তেল দাম

এরপর ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল। সংশোধিত লাইন অনুযায়ী এরপর সতের নম্বর স্টেশন অর্থাৎ সবশেষ স্টেশন হবে কমলাপুর। মোট দূরত্ব হবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ নামে পরিচিত এ রুটটি সবার আগে চালু হচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এ বছর চালু হলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালে চালুর কথা রয়েছে।

এরপর কমলাপুর থেকে বিমান বন্দর এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত লাইনের কাজও ২০২৪ সালে শুরুর কথা। এটি মেট্রোরেল লাইন-১ রুট নামে পরিচিত। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত হবে পাতাল রেল। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত অংশ আবার উড়াল পথে। সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দেরি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আর আগামী বছরের ডিসেম্বরে এমআরটি লাইন-৫ এর উত্তরের রুটের কাজও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই রুট সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা এলাকায় গিয়ে শেষ হবে। রাজধানীর যানজট কমানোর পাশাপাশি যাতায়াত সহজ করতে ২০১২ সালে মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়।

ডিসেম্বর ১১.২০২২ at ১৭:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর