১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে অস্থিরতা সৃষ্টিতে বিএনপির ঘরে আগুন!

ছবি- সংগৃহীত

কী হতে চলেছে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে? কী করতে চান নেতারা? আসন্ন এ সমাবেশকে ঘিরে ইতিমধ্যেই নেতৃবৃন্দ কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। কেউ চাইছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হঠাৎ করে পল্টনের মঞ্চে এনে চমক সৃষ্টি করবেন। আর অনেকেই বলছেন, এইভাবে ‘স্ট্যান্ডবাজি’ করলে প্রকারান্তরে খালেদা জিয়াই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তাকে আবার কারাগারে যেতে হতে পারে। আবার পল্টন, নাকি সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যান, নি নিয়েও রয়েছে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সব মিলিয়ে বিএনপির ঘরেই এখন আগুন জ্বলছে। নেতৃবৃন্দ দ্বিধা, কোথাও কোথাও ত্রিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

সম্প্রতি, বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কানদার বিএনপি নেতাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘বেগম জিয়াকে নিয়ে খেলবেন না। আপনারা রাজনীতি করছেন করুন, আপনারা আন্দোলন করছেন করুন। সেই আন্দোলনে বা রাজনীতিতে আমার বোনকে জড়াবেন না।’ স্পষ্টভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নেতাকে সাফ এই বার্তা জানিয়ে দেন তিনি। শামীম এস্কানদার শুক্রবার রাতে বিএনপির তিন নেতার সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন।

এ ফোনের সূত্র ধরে তথ্য মেলে, বিএনপির একটি পরিকল্পনা আছে যে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির একটি ঝটিকা মিছিল গুলশানে যাবে এবং সেখানে ফিরোজা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসবে। এই মিছিলে বিভিন্ন কর্মীরা যুক্ত হবেন। আস্তে আস্তে গাড়ীকে বিএনপির কর্মীরা ঘিরে রাখবেন এবং এই গাড়িকে নিয়ে যাওয়া হবে পল্টনে। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সংরক্ষিত চেয়ারে তাকে বসানো হবে। তিনি বক্তৃতা দিন না দিন সেখানে বসে থাকবেন। এই বিষয়টি বিএনপির একাধিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আর এটি জানাজানি হবার পর শামীম এস্কানদার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন।

যদিও ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, যদি গুলশান থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয় কিংবা যদি তাকে নয়াপল্টনের জনসভায় উপস্থিত করা হয় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশের সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। দলটির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার রোববার সকালে বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবনে (ফিরোজায়) অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
নভেম্বরে ৪৬৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫৪
হঠাৎ স্বামীকে ভালো লাগছে না? করণীয় জেনে নিন

তিনি বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি। এই কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে। তবে পূর্বনির্ধারিত স্থান ও সময় অনুযায়ী বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশে বিপুল লোকসমাগম করতে চায় বিএনপি। এ নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও পাড়া-মহল্লায় সতর্ক প্রহরাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য অনুমতি দিয়েছে। তবে বিএনপি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে অনঢ়।

এদিকে, বেগম জিয়া কোনো অবস্থাতেই ১০ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হবেন না, বিএনপির জনসভায় যাওয়ার তার প্রশ্নেই আসেনা। বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দারকে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন এবং তার নাম যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে তিনি বিএনপির ওইসব নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করারও হুমকি দিয়েছেন। বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে বিএনপি একটি ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। এই ট্রাম্পকার্ডের মূল ব্যক্তি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে ওইদিন ফিরোজা থেকে নয়াপল্টনের সমাবেশস্থলে নিয়ে আসা হবে এবং সেখান থেকেই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করা হবে।

তবে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলো। অপরদিকে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তুরাগ নদীর তীর ছাড়া বিকল্প প্রস্তাব এলে সেটা বিবেচনা করবে বিএনপি। রোববার বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেকোনো স্থানে সমাবেশ করবো এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে আগ বাড়িয়ে নাশকতা হবে বলে আমার সাংবিধানিক অধিকারকে আপনারা লঙ্ঘন করছেন, কেড়ে নিচ্ছেন। আমরা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করব সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করছেন। দয়া করে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করবেন না। আমরা যে নয়টি সমাবেশ সম্পন্ন করেছি ঠিক একইভাবে ঢাকার সমাবেশ সম্পন্ন করব। উল্লেখ্য, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বেগম জিয়াকে যদি ঘর থেকে বের করা হয় এবং রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়ানো হয় তাহলে তার জামিন বাতিল হবে, তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে। কিন্তু সরকারের এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলেছিলেন যে, ১০ ডিসেম্বর সরকারের নিয়ন্ত্রণে কোনো কিছুই থাকবে না।

এরকম পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া কি বলেন, সেটি ছিল জানার বিষয়। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ইতিমধ্যে বিএনপি নেতাদেরকে ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে না খেলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু রোববার শামীম এস্কান্দারকে বেগম খালেদা জিয়া তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, কোনো অবস্থাতেই তিনি বিএনপির ওই মহাসমাবেশে যোগ দেবেন না এবং কোনো নেতারা যদি তার বাসার আশেপাশে আসে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া একটি শর্তাধীন অবস্থায় ফিরোজায় অবস্থান করছেন, সরকারের বিশেষ অনুকম্পায় তিনি জামিন পেয়েছেন, কাজেই তিনি কোনো অবস্থাতেই ওই জনসভায় যোগ দিতে পারবেন না।

বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, তিনি এখন রাজনীতির চেয়ে নিজেকে রক্ষা করাটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। বর্তমানে তার কারাদণ্ড স্থগিত করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাকে বিশেষ বিবেচনায় জামিন দেওয়া হয়েছে। আর এই জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করলে তাকে আবারও জেলে যেতে হবে, এটা তিনি ভালো করেই জানেন। বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে যখন কারান্তরীন হন তখন তিনি আশা করেছিলেন যে, বিএনপির নেতারা তার পক্ষে আন্দোলন করবেন এবং তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটবে এবং তাকে জেল থেকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবতা তিনি ভালোই উপলব্ধি করেছেন।

আরো পড়ুন:
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
নভেম্বরে ৪৬৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫৪
হঠাৎ স্বামীকে ভালো লাগছে না? করণীয় জেনে নিন

বিএনপির আন্দোলনের সম্পর্কে তিনি ভালভাবেই জানেন। তার অনুপস্থিতিতে বিএনপি নেতারা যে শুধু কথা বলতে পারেন, আন্দোলন করতে পারে না এটাও তার অজানা নয়। আর এ কারণেই এখন তিনি ঝুঁকি নিতে চান না। তাছাড়া শারীরিকভাবেও বেগম খালেদা জিয়া এখন অনেক অসুস্থ বলেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরকম অবস্থায় তাকে যদি কেউ ব্যবহার করতে চায় সেটা হবে অমানবিক এবং ভয়ঙ্কর একটি অপতৎপরতা। তাই আগামী ১০ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে নয়াপল্টনে নিয়ে এসে যে চমক সৃষ্টির পরিকল্পনা বিএনপি করেছিলো, সেই চমক সৃষ্টি আর হচ্ছে না।

বেগম খালেদা জিয়াও পল্টনে যাচ্ছেন না, বিএনপি নেতারাও এখন তাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করবেন না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। তবে এখনো পর্যন্ত বিএনপির কট্টরপন্থী খ্যাত রিজভী পক্ষীয়রা এসব বিষয় নিয়ে মির্জা ফখরুলের কোনো বক্তব্য আমলে নিচ্ছেন না বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জামায়াতকে সঙ্গে রাখা না রাখা নিয়েও দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এদিকে, খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে থেকে চেকপোস্ট ও বেরিকেড তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব। পুলিশের আইজিপির বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের আইজি বলছেন, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তাহলে কেন এই নাটক অভিযান?

সূত্র- গ্রামের কাগজ

ডিসেম্বর ০৫.২০২২ at ১০:৩১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/ এমএইচ