জননেতা মোহাম্মদ নাসিমের ২য় মূত্যু বার্ষিকী আজ

জাতীয় নেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্র, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত ও সফল স্বাস্থ্য মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম।

জাতীয় নেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্র, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত ও সফল স্বাস্থ্য মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিমের আজ সোমবার (১৩ জুন) দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

নির্ভীক সাহসী জনদরদী এই মহান নেতা করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে বার বার ছুটে এসেছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকায় । ২০২০ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে কাজিপুর থেকে ফিরে ১লা জুন রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ এ পজেটিভ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ হয়। ৪ জুন অবস্থার উন্নতি হলে কাজিপুরের আপামর জনসাধারণ আশায় বুক বেঁধে সস্তি অনুভব করে। কিন্তু ৫ জুন ভোরে বড় ধরনের স্ট্রোক হয়। মস্তিস্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে দ্রুত অস্ত্রপাচার করে আইসিইউতে রাখা হয়।

তাঁর চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘন্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষায় কোভিড-১৯ এ নেগেটিভ হলেও , ১২ জুন পর্যন্ত কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকার পর পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে এবং ১৩ জুন শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্ৰামে মোহাম্মদ নাসিম ২ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে জন্ম গ্ৰহণ করেন। পিতা শহীদ মনসুর আলী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পাবনা জুবলী হাই স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি, ১৯৬৭ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স প্রথম পর্ব পড়াশোনা শেষ করেন।

আরো পড়ুন:
অগ্নিদগ্ধ ফায়ার ম্যান গাউসুলের মৃত্যুতে স্ত্রী নির্বাক, কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা
গাবতলীতে প্রতিপক্ষের হামলায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীর আঙ্গুল দ্বি-খন্ডিত

ষাটের দশক থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে স্বৈরশাসন তথা পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলনে অকুতোভয় মোহাম্মদ নাসিম সব সময় সম্মূখ সারিতে ছিলেন। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক। ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করলেও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগে সক্রিয় হন। জগন্নাথ কলেজে পড়াকালীন তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনোনীত হন। তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ এ বাকশাল গঠনের পর মোহাম্মদ নাসিম পাবনা জেলা বাকশালের সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের ১৩তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা, সেই কমিটিতে প্রথম বারের মত মোহাম্মদ নাসিমকে যুব সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। অতঃপর তিনি পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক ও পরে ১৯৮৭ সালের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯২ এবং ১৯৯৭ সালের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে তাকে কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। ২০১২ সালে ১৯তম জাতীয় সম্মেলনে পদোন্নতি দিয়ে তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মন্ডলীর সদস্য করা হয়। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন ছিলেন।

জননেতা মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ -১ (কাজিপুর) থেকে ছয়বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ভুট্রা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে পাবনা অঞ্চলে “ভুট্রা আন্দোলন” সংগঠিত করলে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারারূদ্ধ হন। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন,১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন, ২০০১ সালের পর তৎকালীন সরকারের জুলুম নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে রাজপথে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম যে ভূমিকা পালন করেছেন তা রাজনীতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়েছে।

জুন ১২,২০২২ at ২২:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আসচ/জআ