যশোর রোডে যমদূত হয়ে দাঁড়িয়ে অর্ধশত গাছ

যশোর (যশোর-বেনাপোল) রোডের দুই পাশে যমদূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মরা, আধমরা ও শুকিয়ে যাওয়া অর্ধশত গাছ। বর্ষা ও ঝড়ের মৌসুমে শতবর্ষী রেইনট্রিগুলোর কারণে মৃত্যু আতঙ্কে আছে সাধারণ পথযাত্রী। জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং মামলা জটিলতা নিয়ে গাছ অপসারণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। অচিরেই এর সমাধান না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা করছে দুই উপজেলার মানুষ। এরই মধ্যে আতঙ্ক নিয়েই মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এ রোডে।

গত সোমবার (৩০ মে) গাছগুলো অপসারণের জন্য ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার যথাক্রমে মাহবুবুল ইসলাম ও নারায়ণ চন্দ্র পাল জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বরাবর চিঠি দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যশোর (যশোর-বেনাপোল) রোডের ঝিকরগাছা অংশে শতবর্ষী ও নতুন রোপণ করা অন্তত ৩০টি রেইনট্রি মৃতপ্রায়। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে চারটি, ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে চারটি, পারবাজারে চারটি, ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ মোড়ে তিনটি, বেনেয়ালি বালিখোলায় তিনটি, দেশের বৃহৎ ফুলের বাজার গদখালীতে পাঁচটি, নবীবনগরে একটি, চারাতলায় দুটি, কলাগাছিতে দুটি, নাভারণ পুরাতন বাজারে সড়কের পাশে তিনটি গাছ মরে গেছে। এসব মৃত গাছ ছাড়াও ডালপালাবিহীন অন্তত ২০টি মরা শুকনা গাছ দাঁড়িয়ে আছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঝিকরগাছা মহিলা মোড়ে দুটি, বেনেয়ালি বাজারে তিনটি ও কলোনি বাজারে একটিসহ মোট ছয়টি শতবর্ষী গাছ উপড়ে পড়ে গেছে।

এসব গাছ উপড়ে পড়ায় ফল ব্যবসায়ী কলোনি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের পুরো বসতভিটা ভেঙে পড়েছিল। তিনি জানান, মহাসড়ক তৈরির সময় গাছের বড় বড় শিকড় কেটে ফেলার কারণে এসব গাছ পড়ে গেছে। অন্য গাছগুলোও ঝুঁকিতে আছে।

দুই মাস আগে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হন গদখালী ফুল মার্কেটের শ্রমিক পটুয়াপাড়া গ্রামের আল আমিন। এতে তার চারটি দাঁত ভেঙে যায়। এ ছাড়াও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান তিনি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

ঝিকরগাছা সেবা সংগঠনের সভাপতি ও নাগরিক অধিকার আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার আশরাফুজ্জামান বলেন, পরিবেশবাদীরা ২০১৭ সালে গাছ মারার বিপক্ষে আদালতে রিট করলে ছয় মাসের জন্য গাছ মারতে স্টে অর্ডার হয়। অথচ আজ পর্যন্ত গাছ মারার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মানুষের নিরাপত্তায় গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।

আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে ধর্ষন মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ কারাগারে
প্যানা, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নওয়াপাড়া: ১৩ বছর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন ৪ জুন

যশোর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, যশোর রোডের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ১৭৩৭টি গাছ আছে। এসব গাছের মধ্যে শতবর্ষী পুরাতন রেইনট্রির সংখ্যা ৭৪৫টি, নতুন রেইনট্রি ৬৮টি, মেহগনি ৫৮৮টি, বট ১৭টি, শিশু ১৫টি, ঝাউ দুটি, আম পাঁচটি, কাঁঠাল ২৫৭টি, বাবলা ১৩টি, দেবদারু ১৬টি, শিমুল একটি ও সেগুন ১০টি। যশোর রোডের দুই পাশের গাছগুলোর মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

যশোর রোডের পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণের সময় অনেক গাছের শিকড় কাটা পড়ায় সেগুলো এখন মানুষের মৃত্যুঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে বুধবার (১ জুন) দুপুরে যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ জামান জানান, যশোর বেনাপোল মহাসড়কের প্রাচীন গাছগুলো জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। উচ্চ আদালতের নিষোধাজ্ঞা থাকায় গাছ কাটা যাচ্ছে না।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জেলা পরিষদ আন্তরিক হলে আমি আদালতে রিটকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করে গাছ কাটার ব্যাপার উদ্যোগ নিতে পারি। ‘

বুধবার (১ জুন) যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার মতামত পাওয়া যায়নি।

১৮৪৫ সালে সড়কটি নির্মাণের সময় ভারতের তৎকালীন গভর্নর অকল্যান্ড সহযোগিতা করেন। তখন সড়কের পাশে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশে প্রচুর শিশুগাছ লাগানো হয়। সেই গাছই আজ শতবর্ষী গাছের তকমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যশোর রোডজুড়ে।

জুন ০১,২০২২ at ১৮:১৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কক/জাআ