বগুড়ায় দোকান খোলা রেখে চলছে চাঁদাবাজি

বগুড়া সদরের দোকান মালিকদের দোকান খোলা রাখার জন্য চাঁদা আদায় করছে সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের অসাদু লোকজন। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার বৃহত্তম রেলওয়ে করিতলা হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট, হাবিব ম্যানশন, কাঁঠালতলা মার্কেটসহ সদরের বিভিন্ন মার্কেট শুক্রবার দিন দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও সেসব মার্কেটের দোকান খুলে দিয়ে চাঁদা আদায় করছে সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়নের লোকজন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক কলকারখানা এর জন্য শ্রম আইন মোতাবেক নির্দেশনা আছে যে সপ্তাহে একদিন এবং দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে অন্তত দেড় দিন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে। এরকম আইন থাকলেও মানছে না বগুড়া সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়ন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এইসব চাঁদা নেওয়ার দৃশ্য, সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে চাঁদা আদায় কারীদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানায়, এই টাকা শুধু ইউনিয়নের পকেটেই যায় না বিভিন্ন খাতে এসব টাকা যায় সেই সব খাতের নাম জানতে চাইলে তারা বলতে নারাজ সাফ জানিয়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদা আদায়কারীর একজনকে সাইডে নিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর সে স্বীকার করে এবং বলে আদায় কৃত টাকা বগুড়া সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়ন পাইলেও যার অধিকাংশ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে হয় বগুড়া কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লোকজনদের যাতে তারা এসব দোকান খোলা থাকলেও যেন জরিমানা ও হয়রানি না করে।

খোলা রাখা সদরের বেশ কিছু দোকান মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমার দোকান খোলা রাখি সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়ন এর লোক জন যারা আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয় তারা মার্কেটের আশেপাশে থাকে যদি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আসে তখন তারা আমাদের জানিয়ে দেয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লোক জন থাকা অব্দি আমরা দোকানের শাটার নামিয়ে রাখি, লোকজন চলে যাওয়ার পর আবার দোকান খোলা রাখি। সারাদিন ব্যবসা-বাণিজ্য শেষে সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়নের লোক জন এসে দোকান ভেদে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা খোলা রাখা প্রতিটা দোকান থেকে চাঁদা নেন। এই চাঁদা আদায়ের নেতৃত্ব দেন উক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী রতন রায় ও কার্যকারী সভাপতি শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সাহা, সভাপতি মহাসিন আলী সরকার নিজে।

আরো পড়ুন:
ধরাছোঁয়ার বাইরে মেসি, ব্যালন ডি’অরে সপ্তম স্বর্গ
যেসব নির্দেশনা মানতে হবে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায়

চাঁদা আদায়ের বিষয় নিয়ে রেলওয়ে করিতলা হকার্স মার্কেটের সভাপতি খোকন হাজির সাথে কথা বললে তিনি জানান, করোনাকালীন অনেক দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই তারা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুক্রবার করে দোকানপাট খোলা রাখছে সেটা আমি জানি। কিছু কিছু দোকান মালিক দোকান খোলার বিনিময় সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়নের লোক জন চাঁদা নিচ্ছে এটাও আমি শুনেছি। তবে শুক্রবার আমি নিজে দোকান খুলি না এবং চাঁদা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বগুড়া সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মহাসিন আলী সরকার সাথে কথা বললে তিনি চাঁদা আদায়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।

চাঁদা আদায়ের বিষয় নিয়ে বগুড়া কলকারখানা উপমহাপরিদর্শক ইকবাল হোসেন খানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বগুড়া সদর উপজেলার দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে দোকান খোলা রেখে চাঁদা আদায়ের কথা আমি শুনেছি। বগুড়া কলকারখানা অধিদপ্তর এর অফিসার যারা আছেন তারা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন।

নভেম্বর ৩০.২০২১ at ১১:১৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/রইর/জআ