৪২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ফুলবাড়ী হাউজিং এস্টেটের অধিগ্রহণকৃত ১২ একর জমি

পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে হাউজিং এস্টেটের জন্য ১২ একর জমি ৪২ বছর ধরে পতিত রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন যুগেও হাউজিং এস্টেটটি আলোর মুখ দেখেনি। এখন সে জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্য এবং বাকি জমিতে ঘাস আগাছায় ভরে গেছে।

জানা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই হাউজিং এস্টেটের জায়গা। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা জায়গাটি দক্ষিণে মহাসড়ক সংলগ্ন, পূর্বদিকে জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিমে ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, উত্তরে আবাদি জমি।

১৯৭৯-৮০ সালের ল্যান্ড অ্যাকোয়ার (এল. এ.) কেস নম্বর ৩৮/১১ এর মাধ্যমে বর্ণিত সম্পত্তি হাউজিং এস্টেটের বরাবরে অধিগ্রহণ করেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এতে কানাহার মৌজার জে.এল.নং ৫২ তে জমির পরিমাণ ১০.৯৪এবং গৌরীপাড়া মৌজার জে.এল. নং/৫১ তে মোট= ০.৮৫ সর্বমোট =(১০.৯৪+০.৮৫)=১১.৭৯ একর।

ফুলবাড়ী ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, হাউসিং এস্টেটের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যে উদ্দেশ্যে বর্ণিত জমি অধিগ্রহণ করেছিল তা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি হাউসিং এস্টেট উক্ত অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ বরাবরে একসনা লীজ প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), ফুলবাড়ী দিনাজপুর মহোদয়ের গত ১৩/১১/১৯৯১ খ্রি. তারিখের ১১২৩ নং স্মারকাদেশ মতে ফুলবাড়ী হাউজিং এস্টেট প্রকল্পের পক্ষে চেয়ারম্যান, ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ, ফুলবাড়ী, দিনাজপুরের নামে কানাহার ও গৌরীপাড়া মৌজায় যথাক্রমে ৯৯২ ও ৯২৪ নং হোল্ডিং খোলা হয়।

ভূমি অফিসের সরেজমিন তদন্তে ফুলবাড়ী হাউজিং এস্টেট প্রকল্পের নামে অধিগ্রহণকৃত ১২ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে পতিত বা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে তারা জানান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে এক হাত জায়গা অনাবাদি রাখতে নিষেধ করেছেন, সেখানে ১১.৭৯ একর জমি সাড়ে তিন যুগেও কোনোই কাজে আসেনি। বরং সেখানে মাদকাসক্তদের অবাধ বিচরণ, অনেকে দখল করছে যেন বলার কেউ নেই।

এদিকে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস এবং কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার ১২ একর জমির ৪২ বছরে বোরো-আমন মৌসুম ধরে ফসলের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা হলো, ঐ জমিতে ধান উৎপাদন হলে ১ হাজার ৭শ’ ৬১ মে.টন; চাল হলে ১ হাজার ১শ’ ৭৪ মে. টন। টাকার অংকে যার মূল্য হতো ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তিন ফসল করা গেলে আরো বেশি হতো। যা থেকে সরকার কিংবা জনগণ উভয়েই বঞ্চিত হলো।

আরো পড়ুন :
বদলগাছীতে অপরাজিতা শেয়ারিং মিটিং অনুষ্ঠিত
বৃদ্ধ মা বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলে

ফুলবাড়ীর ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে, তারা নথিপত্রের কাজ শুরু করেছেন। দ্রুতই সে কাজের অগ্রগতি আমরা দেখতে পাবো।

পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, পৌরসভার মধ্যে এতোগুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ৪২ বছর ধরে পতিত রয়েছে,অথচ আমরা জায়গার জন্য পার্ক, গরুর হাট, কাচাঁবাজার করতে পারছি না। হয় হাউজিং এস্টেটের প্রকল্প চালু হোক, না হয় পৌরসভার হাতে দেয়া হোক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ফুলবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খুরশিদ আলম মতি বলেন, আমরা চাই আর কালক্ষেপণ না করে হাউজিং এস্টেটটি দৃশ্যমান হোক।

বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইতোমধ্যে হাউজিং এস্টেট প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছেন। ইতিবাচক কাজের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দিনাজপুর ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ফুলবাড়ী হাউজিং এস্টেট প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ৫/৬ মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই প্লট করে বরাদ্দ দেয়ার কাজ শুরু করতে পারবো। ৪২ বছর কেনো কালক্ষেপণ হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার অফিসে আসা ১ বছর হলো, আমি এবিষয়ে বলতে পারবো না।

নভেম্বর ০১.২০২১ at ১৫:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আহেচৌ/রারি