বীরগঞ্জে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটের হওয়া বইছে

ইউনিয়ন নির্বাচন
ছবি: প্রতীকী

সারাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছেন। তাতে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ তালিকায় নাম আসেনি বিধায় পরবর্তী ধাপগুলোতে ঘোষনা আসবে। ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১টি পৌরসভা নিয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা।

অন্যত্র চলমান ভোটের হাওয়ায় দুলছে বীরগঞ্জ, থেমে নেই, ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী সকল ইউনিয়নে প্রার্থীরা। তারা মরিয়া হয়ে নিজেদের পক্ষে সমর্থন নিতে নানান কৌশলে প্রচার প্রচারণা, সভা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, গনসংযোগ, মটর সাইকেল শোডাউন অব্যাহত রেখেছেন।

চোখে পড়ার মত দৃশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তথা সরকার দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের আনন্দঘন প্রচারাভিযান। দলীয় প্রচার প্রচারণায় মহা ধুম মনে হলেও বিগত দিনে ফলাফল ছিল আওয়ামী লীগের ৩ জন বিএনপি-জামাত-বিদ্রোহী ৭ জন। কথায় আছে বীরগঞ্জের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাটি। এমন কথার বাস্তবতা নষ্ট করেছে বিদ্রোহীরা।

তবে এবার তৃনমুল অনেকটা সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল বিধায় ফলাফল পুরোটাই পক্ষে থাকবে বলে মনে করেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। শিবরামপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং চালাচ্ছেন কার্তিক রায়, তপন রায়, অমুল্য রতন রায়, আনোয়ার হোসেন সহ অন্যরা। অপর দিকে এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বাবু জনক চন্দ্র অধিকারী বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বয়সের ভারে ও দীর্ঘদিন যাবত অসুখে ভুগলেও জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে বলে অনেকের ধারনা। পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির মো. জুয়েলুর রহমান জুয়েল, তিনি সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জহির উদ্দিনের ছেলে। আসন্ন নির্বাচনে তিনিই ফেক্টর মনে করছেন তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সরকার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন তারুণ্যের প্রতীক, সুবক্তা, আপোষহীন নেতা, তৃনমুলের আস্থাশীল, সকলের পরিচিত, প্রিয়মুখ মোস্তাক আহমেদ মানিক।

আরো পড়ুন :
সীমান্তে প্রতিমা বিসর্জনে দুই বাংলার হাজারো মানুষ
রূপগঞ্জে ফাঁস নিয়ে এক নববধুর আত্মহত্যা

তিনি এবার এখানে শক্ত অবস্থান তৈরী করেছেন মর্মে মানুষের মুখে মুখে। অন্যান্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বকুল শাহ্, ইব্রাহিম শাহসহ গতবারের বিদ্রোহী ও পরাজিত প্রার্থী ডা. পরেশ চন্দ্র। শতগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকবারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা কেএম কুতুবউদ্দিন।

বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঝাড়বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। দলীয় কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও সাংগঠনিকভাবে সক্ষমতা খুব একটা জোরদার নয়। বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান হুরমত আলী। দলীয় মনোনয়ন চাইবেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান মতিসহ অন্যরা।

তাছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মো. আব্দুল মান্নান নির্বাচন করেছেন। বিএনপি থেকে পাল্টাপুর ইউনিয়নে উপ-নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন মো. তৌহিদুল ইসলাম। অনেক জনপ্রিয় এবং সদালাপী, নম্র ও ভদ্র স্বভাবের, দক্ষ চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেক আত্ম প্রকাশ করতে সক্ষম বলে তিনি ও তার সমর্থক, নেতাকর্মীদের দাবি। যে দাবির সাথে ঐক্যমত রয়েছে ভোটারদেরও। বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী ছিলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন। বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরেছেন।

বিদ্রোহী ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র নাথ রায় কোকিল, দলীয় ভাল ও পরীক্ষিত নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান মনোনয়ন বঞ্চিত ছিলেন। সমগ্র এলাকার নেতাকর্মী, সমর্থক, ভোটারেরা মনে করে আসনটি আওয়ামীলীগ পুনরুদ্ধার করতে হলে তাঁর কোন বিকল্প নাই।

ইতোমধ্যে ঐ ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে মো. ইয়াসিন আলী, মো. মমিনুল ইসলাম শাহ, সোহেল রানা, গোবিন্দ অধিকারী মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার প্রচারণা চলছে। দলের ভিতর সমঝোতা ফিরাতে না পারলে পুনরায় পরাজিত হতে হবে মর্মে এলাকাবাসীর ধারনা। সুজালপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বাবু মহেশ চন্দ্র রায়। ইউনিয়নটি হচ্ছে থানা সদর, তাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

বিগত নির্বাচনে বেশ কয়েকজন নির্বাচন করলেও তার সাথে কেউ ধোপে টিকে নাই। এবার অনেক প্রার্থী কোমর বেধে জোরে সোরে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, চোখে পরার মত প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন বর্তমান ইউপি সদস্য মো দুলাল হোসেন। তিনি তার সমর্থক নেতাকর্মীদের নিয়ে চলমান দূর্গা মন্ডব সমুহে বিশাল মটরসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালিয়েছেন।

তিনি তার সমর্থকরা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল উন্নয়নের কথা দীর্ঘদিন থেকে প্রচার করা হচ্ছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চেয়ারম্যান পদে দুলাল হোসেনের বিকল্প নাই, ইউনিয়ন শাখায় দলের সিংহ ভাগ নেতাকর্মী তার সমর্থন দিচ্ছে। জনশ্রুতি আছে এবার চেয়ারম্যান মহেশ চন্দ্র রায়ের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, এগিয়ে আছে সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম।

তবে বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। বিধায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং শতভাগ বিজয়ী হবেন বলে দাবি। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন নিতে আরও যাদের প্রচার প্রচারনা চলছে আ. কাইয়ুম চৌধুরী ও মো. মোহাদ্দেছ হোসেন।

বিএনপি দলীয় ভাবে ভোটে অংশ নেবে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে বিগত নির্বাচন ধানের শীষ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মো. ফজলে আলম শাহীন। তার পক্ষে মৃদু গনসংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে জামাত প্রার্থী বিগত নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

অক্টোবর ১৬.২০২১ at ১৬:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/প্ররাজি/রারি