শৈলকুপায় কিশোর কিশোরী ক্লাব থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

হাঁটি হাঁটি পা পা করে দূর্নীতির যাদুঘরে পরিনত হয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা মহিলা অধিদপ্তর। দপ্তরটির কর্মকর্তা রেশমা খানম একক আধিপত্য বিস্তার করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার আলীসান বাড়ি। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থের অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে নানা অনিয়মের পাহাড়। দীর্ঘ বছর শৈলকুপা মহিলা অধিপ্তরের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সরকার পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নে একটি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠনের নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক প্রতিটি ক্লাবে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৩০ জন শিক্ষার্থী সংগ্রহ করা হয়।

ক্লাবে নাচ, গান-কবিতা আবৃতি শেখানোর জন্য পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকবল নিয়োগ করা হয়। প্রতি ৫টি সেন্টারের জন্য ১জন করে ৩ জন কো-অর্ডিনেটর, প্রতিটি ক্লাবে ১জন করে কবিতা আবৃতি ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা আসনের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উক্ত ক্লাবের সম্মানিত সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

১৫ জন সম্মানীভাতা প্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খানম তাদের প্রকৃত সম্মানী কত টাকা, কোন মাস থেকে প্রকল্প শুরু, সম্মানীর টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া কিছুই জানান নাই। বরং কেউ জিজ্ঞেস করলে তাদের হুমকি ধামকি ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।

পৌরসভার কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা তার লিখিত অভিযোগে জানান, সম্মানী ভাতার প্রকৃত হিসাব চাওয়ায় তাকে আজ অবধি একটি টাকাও দেওয়া হয়নি বরং অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।

৮নং ধলোহরাচন্দ্র ইউনিয়নের মহিলা মেম্বর মরিয়ম বেগম জানান, রেশমা খানম একক আধিপত্য বিস্তার করে তাদেরকে অফিসে নিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন। তিনি বলেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ভয়ভীতি দেখিয়েছেন, এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদেরকে প্রকল্প থেকে ছাটাই করবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন।

সারুটিয়া ইউনিয়নের সদস্য কামনা রানী বলেন, কোরবানীর ঈদের আগে আলাদা আলাদাভাবে গোপনে ডেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা হাতে গুজে সদস্যদের বলেন “আপনাদের ঈদ খরচের জন্য দিলাম, কাউকে কিছু বলবেন না সোজা বাড়ি চলে যান” রেশমা খানম সঠিক হিসেব না দিয়ে নয় ছয় করে বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। মডেল স্কুল সেন্টারের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক জানান, প্রকল্পটি শুরু থেকেই আর্থিক অনিয়মে চলছে।

শুরু থেকেই প্রতিদিন ছাত্রদের জন্য নাস্তা খরচ ছিল মাথাপিছু ১৫ টাকা সে হিসাবে প্রতি ক্লাবে ৩০ জনের ৪৫০ টাকা প্রতিদিন। এই হিসাবে প্রতিমাসে একটি ক্লাবের মাসিক নাস্তা খরচ ৩৬শ টাকা। অর্থাৎ ১৫টি ক্লাবে মাসে ৫৪ হাজার টাকা শুধু নাস্তা খরচের বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে অদ্যবধি ২৪ মাসের হিসাবমতে ১২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার নাস্তা খরচের বরাদ্দ হওয়ার কথা।

অপরদিকে অভিযোগকারী সদস্যরা জানান, তাদের মাসিক সম্মানী ২০০০ টাকা অর্থাৎ ২৪ মাসে জনপ্রতি ৪৮ হাজার টাকা হিসাবে ১৫ জনের ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা সম্মানী পাওয়ার কথা। কিন্তু এ যাবতকালে জনপ্রতিনিধিদের হাতে মাত্র ৫ হাজার টাকা গুজে দিয়েই নয় ছয় করে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রেশমা খানম।

তবে একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা জানান, প্রথমদিকে কয়েকদিন নাস্তা দেওয়ার পর বন্ধ করে দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ বছর একই কর্মস্থলে থাকার বিধান থাকলেও বিগত ১০ বছর একই উপজেলায় কর্মরত থাকার সুবাদে গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত সিন্ডিকেট। নিজ জেলা/উপজেলায় প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পদায়নের বিধি নিষেধ থাকলেও তিনি অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজ উপজেলায় পদায়ন বাগিয়ে নিয়েছেন।

তবে ২২-১২-২০১৪ সালে অন্যত্র বদলী হয়ে ৬ মাস পর আবারও ফিরে আসেন শৈলকুপায়। দিনে দিনে বিভিন্ন পন্থায় অর্জন করেছেন সম্পদের পাহাড়। বর্তমানে শৈলকুপার কোর্টপাড়া এলাকায় আলীসান ডিজাইনের বহুতল ভবনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন বেশ চমকের সাথেই। সুরম্য প্রাসাদের মত বাড়িটি ইতমধ্যে সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে। লিফট সুবিধাসহ আধুনিক চাহিদায় নান্দনিক ডিজাইনের প্রতিটি ইউনিট অনেক প্রসস্থ এ বাড়ির অর্থের উৎস খুঁজতেই বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল।

আরো পড়ুন :
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে এক জেলে নিহত, আহত ১

মনোহরপুর ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নার্গিস পারভীন জানান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খানম মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করার জন্য ৩ থেকে ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সখ্যতা তৈরি করে প্রচুর কার্ড বিক্রি করে থাকেন। বছরের পর বছর একই উপজেলায় চাকুরির সুবাদে তিনি তৈরি করেছেন শক্ত অবস্থান, সে কারনেই ধরাকে স্বরাজ্ঞান করে দাপটের সাথে অফিস চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাঁর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থের অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সুধি মহলের দাবি, দীর্ঘদিন একই উপজেলার চাকুরির সুবাদে তিনি প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন সত্বর জেলার বাইরে কোথায় বদলীসহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করা হোক। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দের হিসাব দাখিলে দেখা যায় আপ্যায়ন খরচ ৬ লাখ ১৪ হাজার ২শ ৫০ টাকা দেখানো হয়েছে, অথচ কোভিট-১৯ এর কারনে এসব ক্লাবের ক্লাস বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খানম, প্রকল্পটির অর্থনৈতিক বিষয়ে জানার জন্য জেলা কর্মকর্তা/প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, একাধিক সদস্যদের নিকট থেকে রেশমা খানমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে, যা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে শুরু থেকে তিনি ছিলেন না বলে পূর্বের বিষয়টি তার জানা নেই।

অভিযোগকারীরা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খানমকে প্রত্যাহার পূর্বক তদন্ত করতঃ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অক্টোবর ০২.২০২১ at ১৭:০৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কালি/রারি