প্রতিবন্ধী মাহফুজুলের চার হাতপায়ে আট আঙ্গুল, কাজে নেই না কেউ

বাম হাতে দু’টো আঙ্গুল, ডান হাতেও দুটো আঙ্গুল। একই অবস্থা দুই পায়ের। তবে প্রতিবন্ধী এযুবক সব ধরনের কাজ করতে পারেন। কিন্তু হাত পায়ের আঙ্গুল দেখে কাজ করতে পারবে না ভেবে লোক সমাজে কেউ তাকে কাজে নেয় না। ওই যুবকের নাম মাহফুজুল ইসলাম (২৪)।

সে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের রামশালা আদর্শ গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। মাহফুজুলের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাহফুজুলের পরিবারের সদস্য আট জন। তার বাবা হাবিবুর রহমানও প্রতিবন্ধী। তিনি পায়ের সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।

মা খাতিজা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন আর প্রতিবন্ধী বাবা গ্রাম ঘুরে (ভিক্কা বৃত্তি) চলতো তাদের সংসার। মাহফুজুলের পাঁচ বোন তাদের সকলের বিয়ে হয়েছে। মাহফুজুলও বিয়ে করেছেন সম্প্রতি সে একটি ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন।

মাহফুজুলের পরিবার আগে কাশিড়া মালিপাড়া গ্রামে বসবাস করছিলেন। তখন তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীয় ছিলেন। ২০০৩ সালে তাদের পরিবারের সকল সদস্য কালেমা পড়ে মোসলমান ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তারা উপজেলার কাশিড়া বাজারের একটি পরিত্যাক্ত সরকারি ঘরে দীর্ঘদিন বসবাস করেন।

পরে তারা রামশালা আদর্শ (গুচ্ছ গ্রাম) গ্রামে বসবাস শুরু করে। তখন মাহফুজুলের মা রাস্তার মাটিকাটার কাজ করতেন। বাবা ব্যাটারী চালিত একটি ছোট ভ্যান নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে (ভিক্কাবৃত্তি) বেড়াতেন।

নবমুসলিম হওয়ার পর মাহফুজুলসহ পাঁচ বোনের বিয়ে হয়। তখন মাহফুজুল একটি ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান চালাতেন। ছোট বোনের বিয়েতে সেটিও বিক্রি করে দিয়ে বোনের দেনা পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর মাহফুজুল রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। হাত পায়ে আঙ্গুল কম থাকায় ভাল কাজ করতে পারবে না ভেবে লোকজন তাকে আর কাজে নেয় না।

আরো পড়ুন :
রংপুর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল, ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ
মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও জুয়াড়ীদের অভয়ারণ্য বগুড়ার গাবতলী

সেই থেকে মাহফুজুল বাবা মার ঘাঁরে বসে দিন পার করছেন। মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মায়ের গর্ভে থেকেই আমার দুই হাতে চার আঙ্গুল, দুই পায়েও চার আঙ্গুল। তবে আমি দৈনন্দিন সব ধরণের কাজ করতে পারি। কিন্তু সমাজের মানুষ আমি কাজ করতে পারব না ভেবে আমাকে কাজে নেয় না। এখন আমাকে কেউ যদি একটি ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যানের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে ভ্যান চালিয়ে আমি আমাদের গরীব সংসার চালাতে পারতাম।

মাহফুজুলের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমারও পায়ের সমস্যা। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। তাই ব্যাটারী চালিত একটি ছোট ভ্যানে চরে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সংসার চালায়। আমরা আদর্শগ্রামে বসবাস করতাম। কিন্তু সেখানকার কিছু লোক অন্যায়ভাবে আমাদের উপরে অত্যাচার করে বিভিন্ন মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানীর শিকার করে।

তাই বাধ্য হয়ে ছেলে সন্তানদের নিয়ে আক্কেলপুর পৌরশহরের মধ্যে একটি ভাড়া বাসায় ভাড়া রয়েছি। আমার ছেলেও মায়ের গর্ভে থেকে প্রতিবন্ধী। সে ভ্যান চালাতে পারবে। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে ভ্যান কিনে দিতে পারছি না। মা খাতিজা বেগম বলেন, হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে কালেমা পড়ে নবমুসলিম হয়েছি সপরিবারে। মানুষের কাছে হাত পেতে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। এখন ছেলেটার একটা রোজগারের পথ কেউ করে দিলে আমাদের সংসারের অভাব কিছুটা কমে যেত।

সেপ্টেম্বর  ১৯.২০২১ at ১৮:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আরস্বা/রারি