মিজানুর রহমান নামে এক সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার অত্যাচারে অতিষ্ট কালীগঞ্জের আলাইপুর গ্রামের ৩৫ ঘর সংখ্যালঘু পরিবার। সে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দির্ঘদিন ধরে ওই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী পুরুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। নারী নির্যাতনকারী ওই স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার কবল থেকে রেহায় পেতে গ্রামবাসীরা মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কাছে এক লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ওই গ্রামের সংখ্যালঘু দাস সম্প্রদায়ের ৫ ব্যক্তি স্বাক্ষরিত কপির অনুলিপি জেলা পুলিশ প্রশাসন ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ প্রেসক্লাবে দেওয়া হয়েছে।
আলাইপুর গ্রামের সংখ্যালঘু দাস সম্প্রদায়ের পক্ষে দেবেন দাস সহ ৫ জন স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তাদের গ্রামে ৩৫ টি সংখ্যালঘু পরিবারে প্রায় ১৫০ জন মানুষ বসবাস করেন। যারা বর্তমানে খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিন পার করছেন।
উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও পাশর্বতী আলুকদিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিচয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের মানুষ গুলোকে অতিষ্ট করে তুলছেন। সে বিভিন্ন সময়ে তাদের পাড়ায় প্রবেশ করে মহিলাদের তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেন। অনেক সময় মহিলাদের ভয় দেখিয়েও ব্যবহার করেন। কোন প্রতিবাদ করলেই মারপিট করেন।
গ্রামবাসীরা অভিযোগে আরো উল্লেখ করেছেন, আলাইপুর গ্রামের অমরেশ কুমারের স্ত্রী অনিতা রানীকে নানা সময় মিজানুর রহমান ব্যবহার করে আসছেন। স্বামী হয়ে যার প্রতিবাদ করতে পারেনি অমরেশ। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভূল বোঝাবুঝি হলে স্ত্রী অনিতা বাবার বাড়ি চলে যান। মিজানুর রহমান সেখান থেকে অনিতাকে ফিরিয়ে আনতে চাপ দিতে থাকেন পরিবারকে। এক পর্যায়ে ২৫ আগস্ট রাতে অমরেশকে গ্রামের কলীতলায় নিয়ে যান।
সেখানে ধারালো অস্ত্র গলায় ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে বলে স্ত্রী অনিতাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবি নইলে লাশ হয়ে যাবি। এই অবস্থায় মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে অনিমেশ কুমার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে স্ত্রীকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর মিজানুর ওই বাড়ীতে আবারো যাতায়াত শুরু করেন। বর্তমানে তার অত্যাচাওে পাড়ায় বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। রাত হলেই ভয় ও দিনের বেলায় মিজানুরের দৃষ্টি থেকে যুবতী মেয়েদের আর অল্পবয়সের গৃহবধুদের আড়াল করে রাখতে হয়।
দাসপাড়ার বুলু রানী দাস নামে এক নারী বলেন, মিজানুরের ভয়তে আমরা কোন রকম কথা বলতে পারিনা। তার ভয়তে কোন কিছু স্বীকার করতেও পারিনা। মিজানুরের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের বিটাদের (পুরুষ) তুলে নিয়ে যাবে। তারা রাতে কাজ করে বাড়িতে আসে। এসব ভয়তে আমাদের খাওয়া-ঘুম নেই।
আলাইপুর গ্রামের দেবেন দাস জানান, এখানে বসবাস করার মতো নেই। মিজানুর রহমানের ভয়তে আমরা কথা বলতে পারি না। আমাদের যে কি হবে উপর আল্লাহ জানে। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
আলাইপুর গ্রামের বৃদ্ধা গিরিবালা দাস বলেন, তার ছেলেকে বিভিন্ন সময় মারধর করে। একদিন ঠেকাতে গেলে মিজানুর আমাকেও মারধর করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেরে ফেলার হুমকি দেয় মিজানুর, এই ভয়তে আমরা কোথাও অভিযোগ দেয়নি।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি সত্য নহে। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। অ
স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম জানান, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে তিনি দাসপাড়ায় গিয়েছেন এবং ঘটনার বেশ সত্যতা পেয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি তিনি তদন্ত কওে দেখবেন বলেও জানান।
সেপ্টেম্বর ০১.২০২১ at ২০:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বেহুবি/রারি