স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

যশোরের চৌগাছায় গ্রামের দীর্ঘ দিনের ৮৯টি কাদার রাস্তার চিত্র বদলে দিয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ছোট–বড় এসব কাদার রাস্তার সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা ইট দিয়ে পাকা করা হয়েছে।

টিআর, কাবিখা ও কাবিটার বরাদ্দ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ নিয়ে এবং উপজেলা প্রশাসনের হাতে থাকা সাধারণ বরাদ্দ মিলিয়ে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় এসব রাস্তায় ইটের ছোঁয়া লাগে। সরকারি কর্মসূচির টাকা অপচয় রোধ এবং দ্রুত ও টেকসই সড়ক উন্নয়নে যৌথভাবে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা প্রশাসন। ইটের রাস্তা পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে এসব এলাকার দুর্ভোগ পোহানো মানুষের।প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও টাকা কর্মসূচির (কাবিখা ও কাবিটা) টাকায় গ্রামের রাস্তায় শুধু মাটির কাজ করা হতো। যা দীর্ঘস্থায়ী কোনো উন্নয়নে আসছে না। এ ছাড়া এই খাতের পুরো টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হওয়া নিয়েও বিভিন্ন সময় নানান অভিযোগ ওঠে।

এমনকি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্পের (এলজিএসপি) মাধ্যমে সড়ক পাকা ও পিচ ঢালাইয়ের যে কাজ করা হয় তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব ছোট রাস্তা পর্যন্ত খুব বেশি পৌঁছায় না। ফলে গ্রামের কাদার রাস্তা উন্নয়নে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ জন্য গ্রাম–পাড়ামহল্লার এসব কাদার রাস্তায় ভোগান্তি এত দিন নিত্যসঙ্গী হিসেবে ছিল গ্রামবাসীর। মাঠ থেকে কৃষকের উৎপাদিত শস্য ঘরে তুলতে বা বাজারজাত করতে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

অন্য দিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে টিআর এবং কাবিখা ও কাবিটার ৭০ শতাংশ দিয়ে রাস্তা পাকা করার সুযোগ থাকলেও আগে কোনো সাংসদ বা উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ না নেওয়ায় সে টাকা দিয়ে শুধু রাস্তায় মাটির কাজ হয়ে আসছিল। এই কাজে টাকা নয়ছয় হওয়া এবং সরকারি অর্থের অপচয় হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি অর্থের এই অপচয় রোধ এবং গ্রামের অধিক কাদা হওয়া রাস্তার দ্রুত উন্নয়ন করতে স্থানীয় সাংসদ মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিনের পরামর্শে টিআর-কাবিখার টাকায় রাস্তা ফ্ল্যাট সোলিং (ইট বিছানো) করার সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০২০-২১ অর্থবছরে টিআর ও কাবিখার ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৮৪০ মিটার অর্থাৎ ৮ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ইট বিছিয়ে পাকা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন :
রাজধানীতে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ ৭
স্কুল ছাত্র হত্যার পরিকল্পনাকারী সহ ৫ আটক

চৌগাছার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সাংসদের আনুকূল্যে আসা কাবিখা–কাবিটার বিশেষ বরাদ্দে ৭৩ লাখ টাকায় ৩০টি কাদার রাস্তার ১২ হাজার ফুট ইট বিছিয়ে পাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের হাতে থাকা সাধারণ বরাদ্দে ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকায় ২৬টি রাস্তার ১০ হাজার ৪০০ ফুট সোলিং করা হয়। পাশাপাশি সাংসদের মাধ্যমে টেস্ট রিলিফের (টিআর) ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ৩৩টি রাস্তার ৬ হাজার ৬০০ ফুট সোলিং করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৯টি সড়ক পাকা করার কাজ হয়েছে।’পিআইও ইশতিয়াক আহমেদ আরও বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি সাংসদ ও ইউএনও মহোদয়ের পরামর্শ ও দৃঢ় অবস্থানের এসব সড়ক ইট দিয়ে পাকা করা গেছে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এর আগে টিআর-কাবিখার অর্থে শুধু মাটির কাজই করা হতো। কখনোই রাস্তা পাকা করা হয়নি।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী টিআর-কাবিখা বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সড়ক ইট দিয়ে পাকা করার সুযোগ রয়েছে। এমপি মহোদয়ের পরামর্শে নীতিমালার আলোকে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বর্ষাকালে বেশি কাঁদা হওয়া রাস্তাগুলো সোলিং করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’এ দিকে রাস্তা ইট দিয়ে পাকা করে দেওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগী এলাকাবাসী। উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের রাস্তা কাঁচা থাকায় বর্ষাকালে খুব সমস্যা হতো। সোলিং করায় এখন কাঁদা থেকে গ্রামবাসী মুক্তি পেয়েছে।

আগষ্ট ২৬.২০২১ at ১৬:২১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মই/জআ