ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত কারিগররা

নীরব পরিবেশে হঠাৎ করেই কানে ভেসে আসতো ঠকঠক আওয়াজ। নিঃশব্দ পরিবেশটা কে ছাপিয়ে চলতো কামারের হাতুড়ি আর হাঁপড়। আজ সেই ঠকঠক আওয়াজ নেই। আছে শুধু হতাশায় ভরা কর্মহীন কিছু মুখ, যে মুখে একসময় হাসি ছিল, মনে ছিল আনন্দ, পেটে ছিল ভাত।

সময় আর প্রযুক্তির ছুঁয়া কেড়ে নিয়েছে কামারদের সব খুশি। তবে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে টুংটাং শব্দে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পল্লী। নতুন তৈরি এবং পুরাতন দা-কুড়াল ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বীরগঞ্জের কামররা।

এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। কোরবানির ঈদ তাদের কর্মহীন জীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে একমাত্র কামার পল্লীর প্রবীণ কামার শাহ আলম(৬৫) জানান, আমি যখন এই পেশায় আসি তখন আমার বয়স প্রায় ১৪ /১৫ বছর। বীরগঞ্জ থানায় তখন ১শ’র বেশি কামারের দোকান ছিল, সবমিলিয়ে ৩/৪শ’লোক কাজ করতো।

বর্তমানে পৌরসভার কামারশালায় ৩টি, হাটখোলায় ১টি, ফিসারিতে ১টি সহ মোট ৫টি, পুরো উপজেলায় ২০ থেকে ২২টি দোকান আছে। সারা বছর তৈরিকৃত এসব পণ্য যত বিক্রি হয় না তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে। তাই সামান্য লাভে বিক্রি করছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব।

পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের জেলখানা পাড়ার কসিমুউদ্দিন জানান, কোরবানির পশু জবাইয়ের অন্যতম অনুসঙ্গ দা,ছুরি,চাপাতি,বটিসহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত তারা।গত কয়েক বছরের তুলনায় বিক্রি কম হওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তারা। ঈদ যতই ঘুনিয়ে আসবে বিক্রি ততই বেশি হবে।তিনি আরো জানান, কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার অপ্রতুলতায় দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও।

লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। কয়লার সংকটের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা কয়লা ৫শ’ টাকায় ক্রয় করে আনতে হয়। আগে এক বস্তা কয়লায় দুই দিন চলতো,কিন্ত এখন যায় এক মাস। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ।

আগে প্রতিদিন ১শ’টির মতে কাস্তে তৈরি করতাম এখন ১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন,বাচ্চাদের পড়াশোনা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে।

জুলাই,১৮.২০২১ at ১৫:২৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমটি/এসআর