কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ৩০ মণ ওজনের ‘ব্ল্যাক বস’ নামে একটি গরু বিক্রির উদ্দেশে অবশেষে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। গরুটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এখানে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিদেশি জাতের গরুটির এখন ঠাঁই হয়েছে রাজধানীর গাবতলি কোরবানির পশুহাটে। দুদিন আগে গরুটিকে ওই পশুর হাটে তোলা হলেও এখনো তেমন দাম ওঠেনি। নির্ধারিত দাম ১০ লাখ টাকার কিছু কম হলেও বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন গরুটির মালিক খলিলুর রহমান। এদিকে বিশাল আকৃতির এই গরুটিকে ঢাকা নেয়ার সময় বিদায় জানাতে এলাকার অনেক মানুষ ভিড় করেছেন।
জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান এক বছর দুই মাস আগে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে দেড় লাখ টাকায় গরুটি কেনেন। তখন এর ওজন ছিল ৭ মণ। তিনি গত ১৪ মাস ধরে পরম যত্নে গরুটি লালন-পালন করে আসছেন। উদ্দেশ্য একটাই দৌলতপুর উপজেলার সেরা গরু বানাবেন এটিকে। বানিয়েছেনও তাই। বর্তমানে এর ওজন দাঁড়িয়েছে ৩০ মণে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় এর চেয়ে বেশি ওজনের গরুর সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিদেশি জাতের এই ষাঁড় গরুটির গায়ের রঙ কালো হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে ‘ব্ল্যাক বস’।
খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানের যত্নআত্মী এবং নিয়মিত পরিচর্যায় খুব অল্প সময়েই গরুটির ওজন বেড়ে যায়। এছাড়া তাদের বাড়িতে নিয়মিত কাজ করে আসা ১০ শ্রমিকেরও বাড়তি নজর ছিল গরুটির ওপর। তারা পালা করে একেকদিন একেকজন করে গরুটিকে দেখভাল করেছেন। তারা এই গরুকে খাইয়েছেন- সবরি কলা, ছোলা, ভূষি, ভুট্টা, খৈল ও লিপিয়ার ঘাস। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সবরি কলা এবং সবচেয়ে কম পরিমাণে ঘাস খাওয়ানো হয়। দেশিয় এসব খাবার ছাড়া ক্ষতিকারক বা বিকল্প উপায়ে মোটাতাজা করণের কোনো খাবার খাওয়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৮ ফুট লম্বা আকৃতির ৩০ মণ ওজনের ‘ব্ল্যাক বস’ দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন খলিলুর রহমানের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। অনেকে আবার শখের বসে মোবাইল ফোনে গরুটির ছবি ধারণ করে রেখেছেন। দেখতে আসা অনেকে এতবড় গরু এর আগে কখনো দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন।
খলিলুর রহমান বলেন , কোরবানি ঈদে বিক্রি করবো বলে গত এক বছর দুই মাস ধরে পরম যত্নসহকারে লালন-পালন করেছি বিদেশি জাতের গরুটি। যার ওজন এখন ৩০ মণে এসে ঠেকেছে। ১০ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করেছি। তবে দামে কিছুটা কম হলেও গরুটি বিক্রি করে দেব। ভালো দাম পেলে এলাকাতেই বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অকাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত গরুটির গন্তব্য হলো ঢাকার গাবতলি। এখন দেখা যাক কতদূর কী হয়।
খলিলুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মোবাইল ফোনে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গরুটিকে বাড়িতে রেখেই বড় কোনো ব্যবসায়ী বা কোরবানির জন্য বড় কোনো ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। পাবনা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে বাড়ি এসে গরুটি দেখে গেছেন, দরদামও করেছেন। তিনি বলেন, একজন অর্ধেক দাম পাঁচ লাখ টাকা বলেছেন। কিন্তু সেই দামে না পোষানোয় গরুটিকে আরো বেশি দামে বিক্রির লক্ষে ঢাকার গাবতলি কোরবানি হাটে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেই মোতাবেক গত দুইদিন আগে (১৪ জুলাই) খুবই শান্ত মেজাজের এই ‘ব্ল্যাক বস’ নিয়ে আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই।