নজরদারির ও সংস্কারের অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে বীরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শালবন

দিনাজপুর-ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পূর্ব ধারে মনোরম পরিবেশে বীরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শালবন, যাহা জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষনা করে বাংলাদেশ সরকার, নজরদারি ও সংস্কারের অভাবে অ-দর্শনীয়তে পরিনত হয়ে জৌলুস হারাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছে এলাকাবাসী।

উক্ত এলাকার বাসিন্দা ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুদ্দিন বলেন, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ শালবনটি শহরের প্রানকেন্দ্রের পার্শ্ববতী পৌর এলাকার ৬নং ওয়াড মাকড়াই এলাকাজুড়ে অবস্থিত। জন্মের পর হতে শালবনটি দেখে আসছি, তখন যত বড় দেখেছি এখন চার পাশের শাল গাছ কেটে জমি দখল করে বাগানটি ছোট করে ফেলেছে।

ছোট ছোট চারা গাছ গুলি কেটে ফেলার কারনে অনেক গাছ আর বড় হতে পারছে না। অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাগানের মাটি বালু নিয়ে পুকুর আকৃতির গর্ত বানিয়ে ফেলেছে। যার কারনে অশংক্ষ শালগাছ ভেঙ্গে পড়েছে, হেলে গেছে অসংখ্য গাছ, হুমকির মুখেও রয়েছে বেশ কিছু শালগাছ। শত বছরের এই প্রাচীন শালগাছগুলোর দৃশ্য টি দেখলে মনে হয় কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ডূবে যাওয়া।

আমি সরকারের নজরদারি ও সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয় উদ্যানটির হারিয়ে যাওয়া জৌলুস ফিরে পেতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। বন বিভাগের কর্মকর্তা গদাধর রায় বলেন, বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান শালবনটি প্রায় মাকড়াই ও জগদল মৌজার ১৬৯.৬২ একর জমি নিয়ে গঠিত হয়েছে।

আমি ২০২০ সালের প্রথম দিকে যোগদান করার পরে জেনেছি বাগানের আশে পাশে প্রায় ৫/৬ একর জমি বেদখল রয়েছে। যা আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বাগান দেখাশুনা করার জন্য আমি ও একজন মালি ছাড়া কোন প্রহরী নেই।

সরকার বীরগঞ্জ শালবনটি জাতীয় উদ্যান ঘোসনার মুল লক্ষ বন্যপ্রানী সংরক্ষন কাজের বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সিমানা প্রাচীর না থাকায় আশেপাশের মানুষদের ও গরু ছাগলের অবাধ চলাফেরার কারনে।

ঠাকুরগাও রেঞ্জের আওতায় বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান শালবনটিতে বন্য প্রানীর জন্য বাগানের ফাঁকা জায়গায় ও গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঔষদি গাছ আমলকি, হরিতকি, বহেড়া, জাম, জামরুল, জলপাই, পিতরাজ, হলুদ, চিকরাশি, বেল, কদম, গোলাপজাম, কদম, জাম্বুরা, চালতা, শিদা, শিমুল, কাঞ্চন সহ বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ লাগানো হচ্ছে। এখানে আমাদের বসবাসের জন্য থাকার বাড়ী ঘরগুলী অনেক আগেই নষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত হয়েছে।

বর্তমানে আমাদের জনবল ও বসবাস উপযোগি থাকার ব্যবস্থা দরকার। বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান শালবনটি সংস্কার ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির আশা নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ ইয়াসিন আলী জানায়, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর বীরগঞ্জ শালবনটিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোসনা করে বাংলাদেশেরে একটি র্দাশনীয় স্থানের অর্ন্তগত করেছে। শহরের প্রানকেন্দ্র উপজেলা পরিষদের পার্শ¦বতী দক্ষিনে মহাসড়কের পাশে বাংলাদশেরে অন্যতম সংরক্ষতি এলাকা হওয়ায় শহরের মানুষদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও স্বাস্থ সম্যত্ত মুক্ত বাতাসের জন্য যা সোনার হরিনের মতো।

জাতীয় উদ্যানটি বর্তমানে সংস্কার ও পৌর কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টির অভাবে চোর ও জুয়ারুদের অভয়ারন্য হিসাবে পরিনত হয়েছে। মাঝে মাঝে সুনাযায় বিভিন্ন অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা।

পৌর কর্তৃপক্ষ, আইনশৃখলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন সংরক্ষতি এলাকা জাতীয় উদ্যানটির দিকে যৌথ ভাবে সু-নজর দিয়ে চিত্তবিনদনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করলে যা উত্তর বঙ্গের দার্শ্বনিয় স্থান হিসাবে দ্রুত সু-নজরে পড়বে দেশবাশীর কাছে। বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের জানায়, বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান শালবনটি দিনাজপুর শহর হতে প্রায় ২৮ কিঃ মিঃ উত্তরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পূর্ব ধারে মনরম পরিবেশে অবস্থিত।

শালবনটির পূর্ব ধার দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদীর শাখা ঢেপা নদী, যা তার সৌন্দর্য্যকে আরো দ্বিগুন বৃদ্ধি করেছে। বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যান শালবনটিতে রয়েছে বভিন্নি প্রজাতির বৃক্ষ- যেমন শাল, বতে, বাশ, শিমুল, শিশু, সোনালু গাছ। তবে শাল হচ্ছে এই জঙ্গলরে প্রধান বৃক্ষ। এছাড়াও এই উদ্যানে রয়েছে বভিন্নি প্রজাতরি পাখি, সাপ, স্বরীসৃপ, বানর ইত্যাদি।

যদিও খুব একটা সময় হয়ে উঠেনা তবুও প্রাকৃতির ডাকে মাঝে মাঝে ছুটে যাই শালবনটিতে ঠান্ডা বাতাশের লোভে। এর সৌন্দরর্য্য ও জৌলুস ফিরে পেতে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করে পাশে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করছি।

বীরগঞ্জ পৌর মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন বাবুল জানায়, মহান আল্লাহতালার সৃষ্টি প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা বীরগঞ্জ শালবাগানটি জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোসনা হওয়ায় পৌরবাসীর জন্য বিশাল পাওয়া। তবে এটি এখন পযর্ন্ত বন বিভাগের আওতায় রয়েছে। বন বিভাগের লোকদের অ-দুরদর্শীতায় কিছু সংক্ষক পাতা কুড়ানীরা গাছের চারা কেটে কৃত্রিম পরিবেশ নষ্ট করছে।

আমাদের প্রকৃতি তার নিজের মতো করে গড়ে উঠুক আর আমরা তার সৌন্দর্য উপলব্ধি করে মনে প্রানে মাখিয়ে নেই নিজের আত্মার সাথে বীরগঞ্জ শাল বাগানটিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে এটা কামনা করি। বন বিভাগ এটাকে শুধু জাতীয় উদ্যান নামে নয় মন কাজে প্রধ্যান্য দিয়ে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধৃ করে জাতীয় উদ্যানে পরিনত করতে পৌরসভার সহযোগিতা চায় তবে পৌরসভা অবশ্যই জাতীয় উদ্যান করতে সব রকম সহযোগিতা করবে।

আরো পড়ুন:
যশোরে এমপি নাবিলের পক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
পশুরহাট ও কোরবানির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২৩ নির্দেশনা

তাই আমি মনে করি সকলের সহযোগিতায় আসুন আমরা আমাদের এই প্রাকৃতিক বীরগঞ্জ শালবাগান জাতীয় উদ্যানটিকে রক্ষা করে প্রকৃতিকে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করি।

জুলাই,১১.২০২১ at ১২:৩১:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমটি/এসআর