মিষ্টি চৌধুরী, তৃতীয় লিঙ্গের এক সংগ্রামী মানুষ

মিষ্টি চৌধুরী। তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়ে বেড়ে ওঠা মিষ্টির পথচলাও আর বাকি আট-দশজনের মতোই ছিল। হিজড়া বলে তিরস্কার শুনতে হতো অনেক। কিন্তু মিষ্টি আজ একজন রাজনৈতিক নেতা। অন্য দশজন মানুষের মতো সম্মান নিয়ে বেঁচে আছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের লালিত বাসনাকে বাস্তবে রূপ দিতে একদিন দ্বারস্থ হন সাভার আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলার। রাজনীতির হাতেখড়ি তার হাতেই। ধীরে ধীরে ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাভার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবের সংস্পর্শে আসেন।

এই তিনজনের সাহচার্যে রাজনৈতিক মাঠে পদচারণা শুরু করেন মিষ্টি চৌধুরী। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাভার শাখায় সহ-দপ্তর সম্পাদক পদ লাভ করেন তিনি। রাজনীতিতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মিষ্টি চৌধুরী । বিষয়টি নিজের জন্য, নিজ কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের হিসেবেই দেখছেন মিষ্টি । তবে তার এই উত্তরণের পথ এত সহজ ছিল না । তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করার প্রবল ইচ্ছে পুষে রাখতেন মনের ভেতর। হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর মস্তিষ্কে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব তাঁকে পুলকিত করতো।

কিন্তু তার পায়ে পায়ে যে বাধা পদে পদে উপহাস, বঞ্চনা, নির্যাতনই যেন নিয়তি ছিল তাঁর। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ হয়ে উঠেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। লিঙ্গের বৈষম্য দূর করে তিনি এখন অন্য সাধারণ দশজনের একজ। সম্মানের সাথে রাজপথে এবং নিজ কর্মে তিনি বলিয়ান হয়ে উঠেন।

তবে স্বীকৃতি পেলেও সাধারণ জনগণের চোখে এখনো তারা আমাদের সমাজের থেকে আসা ভিন্ন এক জাতি । সব স্থানে যেন মস্ত বড় এক বাধা । তবুও জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার সংগ্রাম । শেকল ভেঙে ছুঁতে চায় আলো মিষ্টি চৌধুরী । শত বাধা পেরিয়ে তিনি পাড়ি দিতে চান তার নীল আকাশের স্বপ্নে ।

আর দশটা সাধারণ ছেলেদের মত তার ছেলেবেলা কেটেছে ধামরাই ও টাঙ্গাইলে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন ।

মিষ্টি চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন তাঁর বেড়ে উঠার গল্প। বয়সের সাথে সাথে নিজের শারীরিক পরিবর্তন তিনি বুঝতে পারেন। পারিবারিক লাঞ্ছনা ও সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে। বেঁচে থাকার তাগিদে যুক্ত হোন তার কমিউনিটির (হিজড়া) মানুষের সাথে। তিনি ছেলেবেলাতে যে স্বপ্ন দেখে বড় হয়েছেন।তা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের রূপ ধারণ করে একদিন।

এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাভার উপজেলা শাখার উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ লাভ করেন তিনি। তিনি রাজনীতিতে নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন বলে জানান। ধর্মীয়ভাবে তিনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ব্যক্তি জীবনে তার আইডল হিসেবে মনে করেন ঋতুপর্ণ ঘোষ কে।

যিনি ওপার বাংলার জনপ্রিয় পরিচালক। তার সারাদিনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকেন তার গর্ভধারিণী মায়ের মুখ দেখে। তিনি আরো বলেন, দিন শেষে যখন বাসায় ফিরি মায়ের মুখের হাসি দেখে এক ঝলকে চলে যায়। ব্যক্তি জীবনে, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সাধারণ জনগণকে নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কাজের পরিকল্পনা করছেন। সামাজিক যে ভেদাভেদ আমরা অনেকেই মনে করি। এক অর্থে বলতে গেলে আমরা সবাই মানুষ। কেউ নিজে নিজে শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম হয় না। উপরওয়ালা ও প্রাকৃতিক ভাবে আমার আপনার আমাদের সবারই জন্ম। আমরা মানুষ আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে এই সমাজে ।

আরো পড়ুন:
করোনায় সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে ১৫০ কোটি মাস্ক!
না ফেরার দেশে কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার

মিষ্টি চৌধুরী জানান. ছাত্ররাজনীতি থেকেই তার রাজনীতিতে আসা। ছেলেবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ বুকে ধারণ করেই বড় হয়েছি। আমি প্রমান করে দিয়েছি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও অন্য দশ জনের মত মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার যোগ্যতা রাখেন।

জুলাই,০৭.২০২১ at ১৬:৪২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমটি/এসআর