দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক রোগীর অক্সিজেন খুলে আরেক রোগীকে দেয়া হচ্ছে

ভারতীয় সীমান্তবর্তী বৃহত্তম উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জোড়াতালি দিয়ে কোনো মতে চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। ঠেকা কাজ চালাতে একজন রোগীর অক্সিজেন খুলে আরেকজন রোগীকে দেয়া হচ্ছে। সংকটের কারণে বেশিরভাগ রোগীকে কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার কুষ্টিয়া জেলার বৃহৎ আয়তনের উপজেলা দৌলতপুর। এখানকার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে মাত্র ৪টি অক্সিজেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সস্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, এমপি সেখানে ২০০টি অক্সিজেন দেন। তবে কুষ্টিয়ার অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় অক্সিজেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি বলে জানা যায়।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. ফরহাদ হোসেন শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমকে জানান, হঠাৎ করে করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। যে কয়টি অক্সিজেন বর্তমানে রয়েছে জরুরি প্রয়োজন হলে এক রোগীর কাছ থেকে খুলে নিয়ে আরেক রোগীকে দিয়ে সাময়িকভাবে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা একজন রোগীর স্বজন সাংবাদিকদের জানান, তার বাবা আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার হঠাৎ করে অক্সিজেনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। বাবাকে বাঁচাতে তিনি বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেনের জন্য যোগাযোগ করলেও তা মেলেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে তাকে কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা প্রায় প্রত্যেকেরই অবস্থা এ রকম সংকটপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্সিজেনের জন্য রোগীর স্বজনদের ছোটাছুটি, হাহাকার আর কান্নায় এখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।

অক্সিজেনের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন সাংবাদিকদের মাধ্যমে এখানে অক্সিজেন সরবরাহে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। একই সঙ্গে এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছেও অক্সিজেনের জন্য সহযোগিতা কামনা করে ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, সরকারের পাশাপাশি সবাই যদি সহযোগিতা করেন তাহলেই কেবল আমরা করোনা রোগীদের প্রাথমিক সাপোর্ট দিতে পারবো। নইলে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। তবে দৌলতপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত করোনার সর্বশেষ আপডেট তথ্য অনুযায়ী, এদিন কুষ্টিয়া জেলায় ২২৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৯৫ জন এবং নতুন করে আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।