কাজিপুরে দাদন ব্যবসায়ী কোটিপতি সর্বশান্ত শতাধিক পরিবার

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতকয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মন্ডলের পুত্র আঃ হামিদ। নিজে উপার্জনের জন্যে তেমন কোনো কাজই করেন না। কিন্ত প্রতিবেশিদের দেয়া তথ্যমতে এবং তার নিজের ভাষ্যমতে তিনি প্রায় কোটি টাকার মালিক।

তার প্রধান ব্যবসা হলো ছোটখাটো ব্যবসায়ী, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক, গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের তিনি চড়াসুদে ঋণ প্রদান করেন।এই ঋণ পাবার প্রধান শর্ত হচ্ছে ঋণ গ্রহিতাকে নিজের স্বাক্ষর করা খালি চেক (ব্লাঙ্ক চেক) কিংবা জমির মূল দলিল জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়।অনেক সময় ঋণ গ্রহিতার নিকট থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নিয়ে রাখেন। পরে ঋণ গ্রহিতা নির্দিষ্ট সময়ে সুদসহ সমুদয় পাওনা পরিশোধ করলেও তার মুক্তি মেলেনা।

আব্দুল হামিদ ঋণ গ্রহিতাদের নিকট থেকে নেয়া স্ট্যাম্প, জমির কাগজ কিংবা চেক ফেরত নিতে এককালিক মোটা টাকা দাবী করেন। চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেলে তিনি জামানত হিসেবে নেয়া চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো ঋণের পুরো টাকাই তিনি চেকে বসিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা দেন। চেক ডিসঅনার হলে তিনি সেই চেকের কপি দিয়ে ওই ব্যক্তির নামে গৃহিত ঋনের তিনগুণ টাকার উল্লেখ করে আদালতে মামলা দেন।

কোনো প্রকার সরকারি অনুমোদন ছাড়াই প্রায় দেড়যুগ ধরে সাধারণ মানুষ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আব্দুল হামিদ এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার সরেজমিন সাতকয়া গ্রামে গেলে বেরিয়ে আসে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিক ভূক্তভোগী জানিয়েছেন আব্দুল হামিদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বসত ভিটা, এমনকি ব্যবসাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে তার দেয়া মামলার কারণে বাড়ি ছেড়েছেন। এরই মধ্যে অনেক ঋণ গ্রহিতা নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করলেও হামিদের দাবীকৃত অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় আদালতে তাদের নামে চেক ডিসঅনার এর মামলা হয়েছে।

এদেরই একজন উপজেলার ছালাভরা গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলী’র পুত্র ঝুট ব্যবসায়ী আশাদুল আলম। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ব্যবসায়িক জরুরি প্রয়োজনে আব্দুল হামিদের নিকট থেকে ৩’লক্ষ টাকা সুদসহ প্রদানের শর্তে খালি চেকে স্বাক্ষরের মাধ্যমে গ্রহণ করি। শর্তমত সুদসহ সমস্ত টাকা পরিশোধ করলেও চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো নতুন করে আমার নিকট ৮’লক্ষ টাকা দাবি করে উকিল নোর্টিশ পাঠিয়েছে।

কবিহার গ্রামের আব্দুস সোবহানের পুত্র কোরবান আলী জানান, আমার প্রয়োজনে হামিদের নিকট থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেই।এসময় তাকে উত্তরা ব্যাংক লিঃ শুভহগাছা শাখার একটি স্কাক্ষরযুক্ত সাদা চেক(নং এসবিবি-০১০০১৮৫) প্রদান করি। পুরো টাকা শোধ করার পরেও তিনি চেক ফেরৎ না দিয়ে ব্যাংকে জমা করেন ।ওই চেক ডিসঅনার হলে এবছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসে হাওলাদ বাবদ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে আমার নামে আদালতে মামলা দিয়েছেন।

ক্ষুদ্র ঝুট ব্যবসায়ী ছালাভরা কুনকুনিয়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের পুত্র নাসির উদ্দিন টিক্কা জানান, হামিদের নিকট থেকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা নেই। সরল বিশ্বাসে তাকে স্বাক্ষর করা যমুনা ব্যাংক লিঃ এর (টাকার অংক না বসানো, জেসিএ-নং-০৬৩৯২৭৬)চেক দেই। হামিদের সব টাকা দিছি । কিন্তু চেক ফেরত চাইলে সে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা চায়। দিতে পারি নাই বলে সে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমার নামে আদালতে দেড় লক্ষ টাকা দাবী করে কেস দিছে।

শিমুলদাইড় বাজারের আরেক ঝুট ব্যবসায়ী মৃত শাহজাহানের পুত্র শাহিন কয়েক বছর পূর্বে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে হামিদের নিকট থেকে করে ৩ লক্ষ টাকা নেন। এসময় জামানত হিসেবে স্কাক্ষরযুক্ত চেক(যমুনা ব্যাংক লিঃ নং-জেবিএস-৯১০৩৭৫৭)প্রদান করি। সব টাকা শোধ করার পরেও আমার নিকট হামিদ আরও তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। না দিলে সে আমার সাদা চেকে বারো লক্ষ টাকা বসিয়ে ব্যাংকে জমা ডিসঅনার করেছে। পরে আমার নামে মামলা দিয়েছে। এরইমধ্যে আমি নোর্টিশ পেয়েছি। ভয়ে আছি কি হয়।

এমনি করে আব্দুল হামিদের ফাঁদে পড়েছেন গাড়াবেড় গ্রামের ফরিদুল ইসলাম মাস্টার, হেলাল উদ্দিন, বেলতৈল গ্রামের সানোয়ার, আব্দুল হালিমসহ শতাধিক মানুষ।

অভিযোগের বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ি আব্দুল হামিদ বলেন, আমি সাধারণত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টাকা ঋণ স্বরুপ দিয়ে থাকি । তখন ঋণ গ্রহিতারাই আমাকে স্ট্যাম্প কিংবা চেক লিখে দেয়। এখানে আমিতো তাদের সহায়তা করি। চেক নিয়ে টাকা ঋণ দেয়াটা বৈধ কিনা জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন আমার সব কাগজপত্র আছে। এ কারণে উনাদের নামে মামলা করেছি।

আরো পড়ুন:
যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বিপুলের বাড়িতে বোমা হামলা (ভিডিও)
সাভারে সড়কে পথচারীর ভিড়

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, অনুমোদন ছাড়া ঋণ প্রদান করে সুদ আদায় করা কিংবা চেক নেয়া অবৈধ চেক যারা দিয়েছেন তারাও সচেতন নন। এ ধরণের লেনদেনে বিষয়ে সবারই সর্তক থাকা জরুরি। আব্দুল হামিদের সাথে কথা বলেছি তাকে সমুদয় চেকসহ আমার নিকট আসতে বলেছি।