ধর্ষণের অভিযোগে জবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আটক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক এক ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে মাদারীপুরের শিবচরে নবম (৯ম) শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান মুন্সী নাসির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও মাদারীপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রত্ব হারানো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী ছিলেন।

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় নামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান নাসির। দেড় মাস আগে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউপি নির্বাচনে প্রচারণার সময় নাসিরের সঙ্গে ঐ শিক্ষার্থীর পরিচয়, এরপর প্রেম। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এ মাসের ২১ তারিখে এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে নাসির মেয়েটিকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ স্বজনদের। পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

স্বজনরা জানান, “এর বিচার যদি আপনারা না করেন তাহলে আমার এলাকায় নাসির আরও খারাপ কাজ করবে। আমরা তার বিচার চাই।”

এলাকার মাতবরের কাছে অভিযোগ দিয়ে কোনো বিচার পাননি নির্যাতিতার পরিবার। পরে বাধ্য হয়ে আদালতের দারস্থ হন তাঁরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নির্যাতিতার বাবাকে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ডেকে নাসির মারধর করে। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ নাসিরকে আটক করে।

জবিস্থ মাদারীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সম্মেলনের পর তাকে ক্যাম্পাসে দেখা যায় নি। তবে সে এর আগে ছাত্রলীগে সক্রিয় ছিলেন। সে এলাকায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও ছিলেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “হ্যাঁ, নাসির আমার কর্মী ছিলো, তবে এখন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “কোনো কর্মী যদি কোনো অপকর্ম করে তাহলে এর দায় ছাত্রলীগ নিবে না।”

আসাদ বলেন, তার তিন-চার বছর আগেই ছাত্রত্ব শেষ। আর ছাত্রলীগের নাম দিয়ে কেউ কোনো অন্যায় করলে সে তো ছাত্রলীগের ভালো চায় না। সে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে সে শাস্তির যোগ্য। আর তার তো ছাত্রত্বই নাই,এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-ব্রাদার হিসেবে কথা হতেই পারে। আর তার ছাত্রত্ব যাওয়ার পর তার এলাকার নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করে।

আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে প্রথম মিষ্টি জাতের আঙ্গুর চাষে সফলতা

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, “সে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। ভর্তি হওয়ার পর ঝড়ে পড়েছিল। সে তার অনার্স কমপ্লিট করতে পারেনি। এর আগেও ক্যাম্পাসের ছাত্র না হওয়া সত্বেও ক্যাম্পাসে একটা ঘটনার জন্য তার মোটরসাইকেল আটকে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে মুচলেকা দিয়ে সে সেটি নিয়ে যায়। তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যাতে সে আর ক্যাম্পাসে না আসতে পারে।”

তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয় পুলিশ। শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মিরাজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, যেহেতু ছেলেটাকে পাবলিকে আটকাইছে এবং পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করছে, ওকে নিয়ে এসে আমরা নিয়মিত মামলা নিয়ে নিবো। মেয়েটির বাবার লিখিত এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে সে এখন পুলিশি হেফাজতে আছে।

এ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সকলেই সুষ্ঠু তদন্ত এবং কঠিন শাস্তির দাবি করেছেন।