দর নির্ধারণ ছাড়াই বিএডিসি‘তে আমন বীজ সরবরাহ : ক্ষতির মুখে যশোর অঞ্চলের চার শতাধিক চাষি

সরকার ৭৬ কোটি টাকা প্রণোদনা দিলেও বঞ্চিত হয়েছেন চুক্তিবদ্ধ চাষিরা

পূর্ব দর নির্ধারণ ছাড়াই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) আমন ধানের বীজ সরবরাহ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোর অঞ্চলের চারশতাধিক চাষি। বিএডিসি থেকে বীজের যে দাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না বলে অভিযোগ তাদের । অন্যদিকে, হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের সরকার প্রায় ৭৬ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন যশোর অঞ্চলের চুক্তিবদ্ধ এ চাষীরা। এছাড়াও, বিএডিসি থেকে নগদ টাকা অগ্রিম প্রদান করে বীজ ক্রয় করতে হয়।

তাদের ক্ষোভ বীজ ধান সরবরাহের কমপক্ষে ৩ থেকে ৭ মাস পর তাদের পাওনাকৃত টাকা প্রদান করা হয়। চুক্তিকালীন সময়ে চুক্তিতে কোন দর নির্ধারণ করা হয় না। এছাড়া, বর্তমান বাজার দরের থেকে তাদের তুলনা মুলক কম মূল্য প্রদান করা হচ্ছে।

কৃষিবীদদের মন্তব্য, এভাবে কম মুল্য প্রদান করা হলে হয়ত তারা বীজ ধান উৎপাদন থেকে সরে যাবেন। এমনকি বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানীকে উচ্চ মূল্যে বীজ সরবরাহ করবেন। এতে করে প্রান্তিক চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এক্ষেত্রে ব্যহত হবে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স ও আপতকালীন বীজ মজুদ কর্মসূচী। সেক্ষেত্রে বীজ উৎপাদন কমে গেলে ধান উৎপাদনও কমে যাবে। আমাদানী নির্ভর হলে চালের দামও বেড়ে যাবে দেশে।

রবিবার (৭ মার্চ) আমন বীজ ধান সরবরাহের সরকার নির্ধারিত মোটা ধান বীজ প্রতি কেজি ৩৮ ও চিকন ধান বীজ প্রতি কেজি ৩৯ টাকা দরে প্রাপ্ত মূল্য গ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ চাষীদের কৃষকদের ডাকা হলে তারা ওই দরে টাকা/চেক গ্রহণ করবেন না বলে তা প্রত্যাখান করেছেন।

বিএডিসির যশোর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন ও বীজের আপৎকালীন মজুদ কর্মসূচী সূত্র জানিয়েছে, মৌসুম শেষে চুক্তিবদ্ধ চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়। এবার বিএডিসির যশোর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যশোর-ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ২ শত ৯৫ জন কৃষক ২৫১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করেছেন। অন্যদিকে, বিএডিসি যশোর বীজের আপৎকালীন মজুদ কর্মসূচীর আওতায় ১৩১ হেক্টর জমিতে আমান ধানের বীজ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করেছেন।

যশোরের বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ পরিচালক একরামুল হক জানান, কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন ও বীজের আপৎকালীন মজুদ কর্মসূচীর আওতায় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের আমান ধানের ২ হাজার ১শত ৭৯ মেট্রিকটন বীজ সংগ্রহ হয়েছে।

বিএডিসির জন্য আমন ধানের বীজ উৎপাদন হয়েছিল ৩ শত ৮২ একর জমিতে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে বীজ সংগ্রহ শুরু করে বিএডিসি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ করা হয়। এবার মোটা বীজ ৩৮ টাকা কেজি ও চিকন বীজ ৩৯ টাকা দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

অভিযোগকারী চাষিরা জানান, চুক্তিপত্রে বীজের দর উল্লেখ ছিল না। বাজারে সাধারণ ধানের সর্বোচ্চ যে খুচরা মূল্য থাকে তার সঙ্গে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিএডিসি থেকে বীজের মূল্য পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এবার সেটিও করা হয়নি। এখন বাজারে ধানের দাম বেশি হলেও বিএডিসি বীজের দাম দিচ্ছে কম। এ কারণে তারা চেক প্রত্যাখ্যান করে দাম বৃদ্ধির দাবিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারী উপ-পরিচালক (কাঃ গ্রোঃ) বিএডিসি যশোর বরাবর আমন ধানের বীজের মূল্য বৃদ্ধির জন্য লিখিত আবেদন করেন।

চুক্তিবদ্ধ চাষী ঝিনাইদহের হলিধানী গ্রামের মকবুল মন্ডলের ছেলে দেরাজ মন্ডল ভোরের কাগজকে জানান, ভালো ফসলের জন্য ভালো বীজ প্রয়োজন। আর ভালো বীজের জন্য প্রয়োজন বাড়তি পরিচর্যা। বাড়তি পরিচর্যা করে বীজের উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজি প্রতি কমপক্ষে ৪২-৪৫ টাকা। আর বিএডিসি দাম দিচ্ছে ৩৮ টাকা। অন্তত ৪৮-৫০ টাকা দর দিলে বীজ উৎপাদনকারী চুক্তিবদ্ধ চাষীরা উৎসাহিত হবেন। দেশে ধান বীজ উৎপাদন বাড়বে। আমদানী নির্ভরতা কমবে। আর এই দাম দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাষীরা। একই কথা বলেন, যশোর সদর উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মৃত মহসীন আলী মোল্যার ছেলে হাজী মোঃ অলিয়ার রহমান, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে আব্দুল হালিম।

বিএডিসির যশোর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোনের উপ পরিচালক তিমা পাল বলেন, ‘বাজারে ধানের মূল্য কত সেটা আমরা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জেনে নিই। তার সঙ্গে ২৫-৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে বীজের মূল্য নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাই। সেখান থেকেই মূল্য নির্ধারণ হয়ে আসে। এবার আমরা যখন প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম তখন বাজারে ধানের দাম কম ছিল। পরে সেটা বেড়েছে। এর আগেই বিএডিসির সারা দেশের ৩৮টি জোনের জন্য বীজের মূল্য ঠিক হয়ে যায়। নির্ধারণ করে দেওয়া এই দর ধরে চাষিরা এখনও চেক নেননি।’ এখন বীজের মূল্য ৩৮-৩৯ টাকা দেওয়া হলে চাষিরা একটু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বিএডিসির এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন।

মার্চ ০৭, ২০২১ at১৪:৩২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ডিপি/এমআরএইস