দীর্ঘ দুই বছর পর আলিম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

ঝিনাইদহ পিবিআই দীর্ঘ দুই বছর পর আলিম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো। এ ঘটনায় মুল আসামী আব্দুস সালাম শুক্রবার (১৬ই জানুয়ারি) মাগুরা বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। রবিবার (১৭ই জানুয়ারি) দুপুরে ঝিনাইদহ পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। নিহত আলিম রাজবাড়ি জেলার পাংশা থানার পাট্রা গ্রামের নবুয়ত মন্ডলের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, ২০১৮ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার চর চাকদা গ্রামে বকুলের কলা বাগানের ও জনৈক ইমরানের বাড়ির সামনে গড়াই নদীর তীরে অজ্ঞাত একটি লাশের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় চৌকিদার ঘটনাস্থলে এসে থানা পুলিশকে খবর দেয় এবং মৃত দেহটি চৌকিদার ও স্থানীয় মেম্বর আব্দুর রশিদ লাশটি নদীর পাড়ে উঠায়।পরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জিডি মূলে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করে এবং অজ্ঞাত হিসাবে আঞ্জুমান মফিদুলে লাশ দাফন করেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্ত মাখা ৩টি সেন্ডেল ও ১টি মোবাইলের কভার জব্দ করেন এবং লাশের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করার চিহ্ন দেখতে পাই।এ ঘটনায় স্থানীয় চৌকিদার বিকাশ দাস শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাত লাশ হিসাবে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে সুত্রে বর্ণিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ঘটনার বর্ণনায় আরও জানা যায়, নিহতের বাবা নবুয়ত মন্ডল তার ছেলে আলিমের (৩৩) মোবাইলে কল এলে সে মোবাইলে কথা বলতে বলতে তার নিজ বাড়ী পাট্রা গ্রাম থেকে ঘটনার দিন গত ২০১৮ সালের ২৪শে অক্টোবর সন্ধ্যা আনুমানিক ০৭ঃ ৩০ টার সময় বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি অভিযোগে পাংশা থানায় জিডি করেন। পরবর্তীতে সংবাদ পেয়ে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায় গিয়ে জব্দকৃত আলামত ও লাশের ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত করেন এটা তার ছেলে আলিম।

শ্রীপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন মামলার দায়িত্ব নেয়ার পর এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৭ জনকে গ্রেফতার করলেও কোন তথ্য উদঘাটন করতে না পারায় ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বিজ্ঞ আদালত নথি পর্যালোচনা করে স্ব উদ্যোগে মামলাটির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ভেবে পুনঃতদন্ত করার জন্য পিবিআই ঝিনাইদহকে দায়িত্ব দেয়।

মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ গোলাম রসুল (পিপিএম) এর উপর তদন্তভার অর্পণ করা হয়।তিনি মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে মামলার ডকেট ২০২০ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালত হতে সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করেন এবং ভিক্টিমের আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করেন।এরপর প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে সন্দেহ মূলক আসামী আব্দুস সালাম এর সিডিআর সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করেন।তদন্তকালে তিনি জানতে পারেন, এ হত্যাকাণ্ডের পর পরই আব্দুস সালাম বাড়ী থেকে নিরুদ্দেশ থাকেন।মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের পর সে পুনরায় এলাকায় ফিরে আসে।

পিবিআই’র এ কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ই জানুয়ারি আসামী আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। তিনি বলেন, আদালতে আসামি আব্দুস সালাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধীতে ঘটনার সত্ততা স্বীকার করে জানিয়েছে যে, ভিক্টিম আলিম একজন নারী লোভী ছিল। আলিম তার গ্রামের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে।এ ছাড়াও আলিমের স্ত্রীর সাথে আব্দুস সালামের ছোট ভাই লিটনের পরকিয়া ধরা পড়লে গ্রাম্য সালিশে লিটনকে নাকে খত দিতে হয়েছিলো।

ভায়ের প্রতিশোধ নিতেই আলিমকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত করে আব্দুস সালাম এবং ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মেয়ে লোকের লোভ দেখিয়ে নদীর ওপারে লাঙ্গলবাধ গো- হাটের পার্শে শ্মশান ঘাঁটের কাছে বকুলের কলা বাগানে গড়াই নদীর পাড়ে নিয়ে তার এক বন্ধুসহ দুই জনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলিমকে জবাই করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

জানুয়ারী, ১৮, ২০২১ at ১৭:৪২:২৫ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/কেএল/এমআরএইস