ঘোড়াঘাটের রাজাকারপুত্র বাবুর বিরুদ্ধে আরো ৬টি মামলা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শের আলী ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতারকৃত সেই এমপির এ্যাম্বাসেডার মুখপাত্র ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, প্রতারনা, আত্মসাৎ, চুরি ও মানহানীর পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেছে।

ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, প্রতারনা, আত্মসাৎ, চুরি ও মানহানীসহ ৪টি মামলা ছাড়াও আরোও ৬টি মামলার প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় ও কাশিয়া বাড়ি এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সুত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গ্রামের নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধসহ প্রায় ৩ শতাধিক মানুষকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা যজ্ঞে নেতৃত্ব দেন দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় খোদাদাতপুর কলোনীর সাহাব উদ্দিন খান (সাবু খান)।

খোদাদাতপুর কলোনীর সাহাব উদ্দিন খান (সাবু খান) ছাড়াও হত্যা যজ্ঞে অংশ নেয় নুরজাহাপুর কলোনী, আফসারাদ কলোনী, নাসিরাবাদ কলোনী সহ বিভিন্ন কলোনীর ১১ জন বিহারী। সেই কুখ্যাত রাজাকারের পুত্র ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু। রাজাকারের পুত্র বাবু নিজেকে প্রচার করে বেড়ানো দাম্ভিক ঔদ্ধত্ত্য স্বভাবের এমপির এম্বাসেডর হিসেবে পরিচয় দানকারী গ্রেফতারকৃত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কথিত সাংবাদিক ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে গেছে।

গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জমা হচ্ছে থানায় । ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবুর বিরুদ্ধে আরোও ৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে । এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রুজু করলো থানা পুলিশ। ভুক্তভোগী অভিযোগকারীরা জানান, স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের একান্ত এ্যাম্বাসেডার বা মুখপাত্রের পরিচয়, ও ঘনিষ্ঠতায় শত অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে গেলেও এত দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। থানায় প্রতিদিন নানা ধরণের অভিযোগ নিয়ে আসছে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। গত বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বাবুকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। পরে তার বাড়ির সামনে থেকে বাবুর ব্যবহৃত একটি চোরাই প্রাইভেট কার জব্দ করে অপর আরো একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ‍চুরি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় গ্রেফতার করে তাকে গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করার পর তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে ঘোড়াঘাট সহ আশপাশের একাধিক উপজেলার অসংখ্য ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

সে এমপির ছত্র ছায়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে লক্ষ লক্ষ টাকা লুটিয়ে নিয়ে বাড়ি গাড়ির মালিক বনে গেছে। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে যা ইচ্ছা তাই করে আসছিল। জেল হাজতে থাকা ইফতেখার আহম্মেদ খাঁন বাবু নিজেকে সাংবাদিক নেতা ও যুবলীগ নেতা সহ সাংসদ শিবলী সাদিকের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন প্রতিনিধি ও ‘আমার এমপি ডট কম’ সংস্থার দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এর অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। এমপি শিবলী সাদিক ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচিতে সে কৌশলে এমপি ও নেতাদের সাথে ছবি তুলে তা ফেসবুকে প্রচার করে এমপি ও নেতাদের মন জয় করে নেয়। সে স্থানীয় এমপি নেতা ছাড়াও ঢাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও কৌশলে মন জয় করেছে। এই অদৃশ্য খুটির জোরে প্রতিনিয়ত অপকর্ম করে গেলেও, এমপির আস্থাভাজন ভেবে মুখ খুলতে সাহস পায়নি ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।

এই কারণে সে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন কুকর্ম করত। শুক্রবার রাতে পৃথক দুজন ব্যক্তি বাদী হয়ে বাবুর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা দায়ের করে। মামলা দুটির এজাহার অনুযায়ী দেখা যায়, ইফতেখার আহম্মেদ খান বাবু ঘোড়াঘাট উপজেলার বালু ব্যবসায়ী শের আলী ও জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে বালু ক্রয়ের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে । সে নাম মাত্র কয়েক হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা চাইত গেলে সে দিতে অস্বীকৃতি জানায় । পাওনা টাকা চাইতে গেলে ওই দুই ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি প্রদান করে। অপরদিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদের প্রাণনাশ করা হবে, এ ধরণের হুমকি প্রদান করে বাবু। ওই ব্যবসায়ীরা ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি।

নতুন দুটি মামলার বিষয় নিশ্চিত করে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত মোট ৪টি মামলা রুজু হয়েছে। আরো ভূক্তভোগী ৭ ব্যক্তি ৭টি অভিযোগ থানায় জমা দিয়ে গেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ব্যবসার সংক্রান্ত ও বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বেশি। অভিযোগ গুলোর সত্যতা আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। বিগত সময়ে বাবু তার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হুমকি ধামকি দিয়ে ও হেয় প্রতিপন্ন করে মানহানিকর স্ট্যাটাস দিয়েছে। তারাও এখন প্রমান সহ থানায় অভিযোগ দিচ্ছে। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার খোদাদাতপুর এর কুখ্যাত রাজাকার সাহাব উদ্দিন খান(সাবু) খান এর পুত্র বাবুর বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিম উদ্দিন আরোও জানান, বাবুর মাধ্যমে হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় থানায় এসে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করছে। আমরা বিষয় গুলো যাচাই বাচাই করে দেখছি, সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জানুয়ারী, ০৩, ২০২১ at ১৭:৩৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমইউএএম/এমজেইউ