১১ বাসে আগুন: ৪ থানায় ৭ মামলা, গ্রেপ্তার ১৫

রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ১১ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চার থানায় এ পর্যন্ত সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা ও চলন্ত ১১টি বাসে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা যাত্রী সেজে বাসে উঠে গানপাউডার বা এ জাতীয় বিস্ফোরক দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়-এ রকম আলামত পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসের পেছনের অংশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) ছিল ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন। উপনির্বাচন ঘিরেই রাজধানীর অন্য এলাকায় নাশকতা চালানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

গণপরিবহনের যাত্রী, চালকসহ ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ২০১৩-১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে হরতাল ও অবরোধে যেভাবে বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়, সেভাবেই গতকাল হঠাৎ আগুন দেওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় উৎকণ্ঠার সঙ্গে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছে সবাই। কারণ ওই নির্বাচনের পর গত কয়েক বছরে যানবাহনে এমন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। সম্প্রতি ঢাকা-১০ ও ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন হয়েছে। সে সময়েও এমন নাশকতা হয়নি।

অগ্নিসংযোগের এ ঘটনাকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমাতসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

অন্যদিকে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আবার নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। নাশকতার ঘটনাকে ‘সরকারের নীলনকশা’ বলে অভিহিত করেছেন দলটির নেতারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এসব ঘটনা ঢাকা-১৮ আসনে চলমান উপনির্বাচন কেন্দ্র করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তিনি আরো বলেছিলেন, কয়েকটি স্থানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গানপাউডার বা এজাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া গেছে। কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। আবার দাঁড়ানো সরকারি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় আলাদা মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য মতে, দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে পল্টন থানার বিএনপি অফিসের উত্তর পাশে কর অঞ্চল ১৫-এর পার্কিং করা সরকারি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১টার দিকে মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাস, ১টা ২৫ মিনিটে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে রমনা হোটেলের সামনে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চলন্ত বাস, দেড়টায় শাহবাগ আজিজ সুপারমার্কেটের সামনে দেওয়ান পরিবহনের বাস, ২টা ১০ মিনিটে সচিবালয়ের উত্তর পাশে রজনীগন্ধা পরিবহনের বাস এবং বংশাল থানার নয়াবাজার এলাকায় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে দিশারী পরিবহনের বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে পল্টন থানা এলকায় জৈনপুরী পরিবহনের বাস, বিকেল ৩টায় মতিঝিলে পূবালী পেট্রল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় বিআরটিসির দোতলা বাস এবং বিকেল ৪টা ৩২ মিনিটে ভাটারা থানাধীন প্রগতি সরণির কোকা-কোলা মোড়ে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘটনায়ই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।

তবে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম শাহজাহানপুর থানাধীন খিলগাঁও এলাকায় একটি বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সন্ধ্যায় উত্তরার আজমপুর ফ্লাইওভারের কাছে আরেকটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। পুলিশের তথ্যের সঙ্গে এই হিসাব যোগ করলে মোট ১১টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরকে দায়ী করেছে।