কর্মীদের খোঁজও নেয় না যশোর বিএনপি

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটেও জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি যশোর জেলা বিএনপি। এমনকি সংগঠনের কর্মীদেরও খোঁজ নিচ্ছেন না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দীর্ঘদিন সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকা এবং করোনা পরিস্থিতিতে জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের এমন আচরণে তৃণমূল নেতাকর্মীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যদিও জেলা বিএনপির নেতারা দাবি করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

সূত্র মতে, ২০০৯ সালে যশোর বিএনপির সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়ন। এর এক বছর পর ২০১০ সালে তিনি মারা যান। ওই সময় থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি শামসুল হুদা ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৬ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলনের জন্য সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তারা সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এতে আহবায়ক হন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী নার্গিস বেগম। আর সদস্য সচিব হন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। কিন্তু নার্গিস-সাবু’র নেতৃত্বাধীন সেই আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

আরও পড়ুন :
শিশুর করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন
কৃমির যন্ত্রণায় ভুগছেন? সহজেই মুক্তি মিলবে আট ঘরোয়া উপায়ে
মাস্ক না ফেস শিল্ড, করোনা প্রতিরোধে কোনটি কার্যকর?

তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের দাবি, রাজপথে নামা সম্ভব না হলেও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও মনোবল চাঙ্গা রাখা সম্ভব। জেলা নেতৃত্ব সেটা না করে নিজেদের রক্ষায় অনেকটা চুপচাপ থেকেছেন। মোবাইলে কল দিলেও অনেক সময় রিসিভ করেননি।

মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির এক নেতা দাবি করেন, জেলা বিএনপির অনেক নেতা আইনজীবী। আদালতে মামলা লড়াইয়ে তাদের তেমন সহযোগিতা মেলেনি। বর্তমানে তারা সবাই করোনাভাইরাসের দোহাই দিয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছেন।

যশোর সদরের আম-বটতলায় কথা হয় বিএনপি কর্মী শাহিনের সাথে। তিনি বলেন, জেলা বিএনপির নেতারা আমাদের খোঁজ নেন না। শহরে গেলে তাদের সঙ্গে উল্টো দেখা করে খোঁজ নিয়ে আসি। জেলা বিএনপির কোন্দল নিয়ে তিনি বলেন, ভোট এলে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে গ্রুপিং লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া প্রকাশ্যে বিএনপির তেমন কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ কর্মী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দলের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ কিংবা ত্রাণ সহায়তা পাইনি। শুনেছি শহরের দিকে তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মারুফুল ইসলাম পছন্দের লোকজনকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার (ডোমার হোটেলের পেছনে) কয়েকজন বিএনপি কর্মীর সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য জানা গেছে। তারা বলেন, রোজার মধ্যে চুপিসারে মারুফুল ইসলাম ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলের নির্দিষ্ট নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। সেখানে সাধারণ মানুষের নাম ছিল না।

যশোরের রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম রন্টু বলেন, মানুষের জন্য রাজনীতি করা রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য। ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।

আরও পড়ুন :
ঠাণ্ডা বা ফ্লু থেকে নিস্তার মিলবে এক কোয়া রসুনেই!
মধ্যরাতে আচমকা মাটির নিচে ঢুকে গেল ৫ বাড়ি

যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকার ইজিবাইক চালক হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি ভাবে অনেক ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, এমনটা শুনিনি। তার কথা শেষ না হতেই সবজি বিক্রেতা হুমায়ন বলেন, বিএনপি তো যশোরের জনগণকে কিছু দিয়েছে বলে আমিও শুনিনি।

তবে গেল রমজান মাসে জেলা বিএনপি প্রত্যেক ওয়ার্ডে ইফতার সামগ্রী ও অন্য উপকরণ বিতরণ করেছে বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক। তিনি বলেন, জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতারা যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন সেক্ষেত্রে দলের কর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জনগণ ছাড়াও চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ও সাংবাদিকদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য আড়াইশো পিপিই দিয়েছে যশোর বিএনপি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নেই। দলের নেতাকর্মীদের নিরাপদে ও সুরক্ষিত থাকতে বলা হয়েছে। মোবাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে হাইকমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক কর্মসূচি পালন করা হবে।

জুন ২২, ২০২০ at ১০:৪০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ডিবি/এমএআর