রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী, উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এলজিইডির একটি রাস্তার কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃষ্টির মাঝেও তড়িঘড়ি করে চলছে নির্মাণ কাজ। ফলে টিকছে না রাস্তায় ব্যবহৃত উপকরণ। একদিকে কাজ করা হচ্ছে অন্যদিকে উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এই অনিয়মে বাধা দিতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজনের হুমকির মুখে পড়ছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ চলছে এলজিইডির অর্থায়নে। এর মধ্যের একটি হোসেনাবাদ স’মিল পাড়া থেকে মথুরাপুর গোহাট পর্যন্ত। ১৭শ মিটার এই রাস্তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ লাখ ২৭ হাজার ২৭৬ টাকা। সিডিউল অনুসারে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর কাজটি শুরু হয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১২ মার্চ। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই রাস্তার নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

আরও পড়ুন:
কোটচাঁদপুরে পৌর কাউন্সিলর রেজাউল পাঠান গ্রেফতার
করোনা বিল গেটসের তৈরি!
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ মারা গেছেন

নিম্নমানের ইট, খোয়া, পাথর এবং বিটুমিন দিয়ে এই রাস্তা নির্মাণ করায় এর প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলীর (কুষ্টিয়া) কাছে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার উদ্দিন জোয়ার্দার সোমবার (১৫ জুন) সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান। এ সময় প্রকৌশলীর সঙ্গে থাকা ঠিকাদারের লোকজন প্রতিবাদকারী এলাকাবাসীকে হুমকি দেন বলে তারা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন।

উঠে যাওয়া রাস্তার কার্পেটিং স্থানীয় কিশোরদের হাতে। ছবি: দেশ দর্পণ

এলাকাবাসী জানান, টিটু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাসির উদ্দিন নামে এক ঠিকাদারের মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই রাস্তার কাজটি সম্পন্ন করার পাঁয়তারা করছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ চলমান থাকা অবস্থাতেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় পরে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়। একই সাথে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকাদার নাসির উদ্দিনের কাছে কাজটি ছেড়ে দেয়। সময় স্বল্পতার কারণে তড়িঘড়ি করে বৃষ্টির মাঝেও কাজ করা হচ্ছে। বাধা দিতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজনের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শুনে আসছি রাস্তার কাজে অনিয়ম হচ্ছে। এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে তাদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। নিম্নমানের ইট, খোয়া, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। হাত না লাগাতেই এই রাস্তার কার্পেট উঠে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

কার্পেটিংয়ের একটি অংশ হাতে নিয়ে দেখাচ্ছেন ভ্যান চালক। ছবি: দেশ দর্পন

ঠিকাদার নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, টিটু আমার চাচা, আমরা দুজন এক সাথে কাজ করি। আমাদের যে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেই কাজটি উপজেলা প্রকৌশলী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করিয়ে নিচ্ছেন। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নাই।

উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার উদ্দিন জোয়ার্দার বলেন, আমার অফিসের লোকজন সব সময় কাজটি দেখভাল করছেন। তবুও কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃষ্টির মাঝে কাজ করা যায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বৃষ্টি হলে কখনো কাজ করা সম্ভব নয়। বৃষ্টিতে কাজ হয়ে থাকলে এর দায়ভার ঠিকারদারকে নিতে হবে। এলাকাবাসীকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

জুন ১৫, ২০২০ at ২৩:৪২:৩২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/তআ