যবিপ্রবির শিক্ষক লাঞ্ছিত : ১৭ দিনেও বিচার পাননি

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সামাদ কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী দ্বারা লাঞ্ছিত হন। ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও বিচার পাননি ভুক্তভুগি শিক্ষক।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বিচার চেয়ে শিক্ষক সমিতিকে দেওয়া অভিযোগপত্রে জানান, “রমজান শুরুর পূর্বের দিন গত ২৪ এপ্রিল করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে বিশ্ববিদ্যালয় লকডাউন করা হবে। সেজন্য তিনি প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করার জন্য বাজারে যান। বাজার শেষে বিকাল আনুমানিক ৪ ঘটিকায় তিনি একজন গ্যাসের চুলা মিস্ত্রীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করান।

আরো পড়ুন :
শিবগঞ্জে অসহায়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাজু
৪৩টি পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করল বিএসটিআই
করোনা : রাজশাহী বিভাগে আক্রান্ত বেড়ে ২২৩

কাজ শেষে বিকাল ৫.৩০ ঘটিকায় গ্যাসের চুলা মিস্ত্রী যখন শিক্ষক ডরমিটরির নিচে আসেন তখন দুজন আনসার সদস্য আনসার সমীর ও জাহাঙ্গীর তাকে গালিগালাজ করেন এবং মারতে উদ্যত হন। তখন শিক্ষক বিষয়টি জানতে চাইলে শিক্ষককে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। শিক্ষক বিষয়টি জানাতে নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে আসতে বললে তিনি আসেননি। তারপর আব্দুস সামাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান করার পর নিরাপত্তা কর্মকর্তা আসলে তাদের কথা হয় তখন তিনি (নিরাপত্তা কর্মকর্তা) জানতে চান কেন শিক্ষক মটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনার তদন্তের জন্য ডিনস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও এখন বিচার পাননি ভুক্তভোগী শিক্ষক।

এ বিষয়ে যবিপ্রবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, “বিষয়টি খুব দুঃখজনক, পরবর্তীতে যখন আমি জানতে পারি তখন প্রশাসনের নির্দেশে আনসার সদস্যদেরকে ডরমিটরির সামনে গিয়ে প্রকাশ্যে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়াই, কিন্তু পরে জানতে পারি স্যার তখন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। করোনা পরিস্থিতির জন্য কোনো আনসার সদস্যকে এই মুহূর্তে ছুটি বা অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান জানান, “করোনার এ ক্রান্তিকালে লকডাউনের কারনে কোনোপ্রকার কাজ বা তদন্ত করা সম্ভব হয় নি আর আমি বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজও নিতে পারিনি। বিষয়টি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ড. মো. আমজাদ হোসেন জানান, “শিক্ষক আব্দুস সামাদ যখন বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন তখন আমি সকল শিক্ষকগণের সাথে যোগাযোগ করে শিক্ষক সমিতি থেকে বিচার চেয়ে রেজিষ্ট্রার বরাবর প্রতিবাদলিপি দিই। কোনো শিক্ষকের সাথে কেউ এমন ইেক্কারজনক আচরণ করবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, “ঘটনাটি ঘটার পর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ভুক্তভোগী শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিষয়টি জানান। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক, আনসার সদস্যরা কোনোভাবেই শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে কোনো শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে না। আমি তৎক্ষনাৎ ওই দুই আনসার সদস্যকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করার জন্য নির্দেশ দিই। মৌখিকভাবে ওই শিক্ষকের বিভাগীয় দুই জেষ্ঠ্য শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঘটনাটির তদন্ত করার জন্য। আর সম্পূর্ণ প্রশাসনিক উপায়ে তদন্ত ক্যাম্পাস না খুললে সম্ভব নয়। মৌখিকভাবে গঠিত তদন্ত কমিটির ফলাফল এখনও আমার কাছে আসে নি, আসলেই খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।”
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বত্র শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার চেয়েছেন যবিপ্রবি পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। খুব দ্রুত এ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচারও দাবি করেন তারা।

মে ১১, ২০২০ at ২০:২৭:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আরএ/এএডি