সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন করোনা আক্রান্ত সেই দম্পতি

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সেই আলোচিত দম্পতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের নির্ধারিত আইসোলেশন ওয়ার্ডে একমাত্র মেয়েসহ চিকিৎসাধীন এই পরিবারটিকে ১৬ দিন পর শনিবার (৯ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর এলাকার তছিকুল ইসলাম (৩১) ও তার স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৫)। এরপর গত ২৪ এপ্রিল পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে গোপনে নিজ বাড়ির উদ্দেশে পালিয়ে আসার পথে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হন তারা।

ওইদিন এই দম্পতিকে রাখা না রাখা নিয়ে দুই জেলার (রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া) কর্মকর্তারা বিপাকে পড়ে যান। শুরু হয় ঠেলাঠেলি। দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির পর দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার মানবিক হস্তক্ষেপে করোনা আক্রান্ত এই দম্পতির ঠাঁই হয় নিজ জেলা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।

এখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালে গত ২৮ এপ্রিল
করোনা আক্রান্ত এই দম্পতির শিশুকন্যা ফাতেমার শরীরেও কোভিডের উপস্থিতি ধরা পড়ে। ১৬ দিন ধরে আক্রান্ত পরিবারটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠায় শনিবার (৯ মে) বিকেলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ফুল দিয়ে বিদায় জানান। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে পুষ্টিকর খাবার ও শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, করোনা আক্রান্ত এই দম্পতিকে নিয়ে আমরা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলাম। পাঁচ বছর বয়সী শিশুকন্যা ফাতেমাকে নিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে থাকতেন তছিকুল-শিল্পী দম্পতি। গত ১৯ এপ্রিল এই দম্পত্তি কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে তারা ঢাকা মেডিকেলে গেলে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা আইইডিসিআরে পাঠিয়ে চিকিৎসকরা তাদের বাসায় গিয়ে সাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। এরপর ২২ এপ্রিল তছিকুলের এবং পরেরদিন ২৩ এপ্রিল তার স্ত্রী শিল্পীর পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর পরেরদিন ২৪ এপ্রিল সেখান থেকে পালিয়ে বাড়ি আসার পথে রাজবাড়ী থেকে তাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ। পরে দুই জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা আক্রান্ত এই পরিবারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়ার চিকিৎসকরা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে যুদ্ধ জয় করেছেন। এই দম্পতিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে গত ১৬ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ ওঠার পর কেএমসিএইচের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ নিশ্চিত হয়েই আজকে (শনিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হলো।

সিভিল সার্জন জানান, এ নিয়ে এই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পাঁচজনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হলো। শনিবার সর্বশেষ এই তিনজন রোগীর ছাড়পত্র দেয়ার পর এখানকার আইসোলেশন ওয়ার্ডে আর কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী নেই।

এদিকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বিদায় নেয়ার সময় তছিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। যখন আমাদের দুজনেরই করোনা পজিটিভ আসে আমরা বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিশেষ করে একমাত্র মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদি মরতেই হয় তাহলে গ্রামে গিয়েই মরব। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হই। আল্লাহর অশেষ রহমত আর চিকিৎসকদের চেষ্টায় আজ আমরা স্বপরিবারে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছি।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের ভ্যাগল মালিথার ছেলে তছিকুল ইসলাম রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুকের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় একমাত্র মেয়েকে দেখাশোনার কথা চিন্তা করে তারা গোপনে বাড়ি ফিরে আসার পথে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসেন এই করোনা আক্রান্ত দম্পতি।