চৌগাছায় অসহায় হয়ে পড়েছেন অলংকার কারিগররা

যশোরের চৌগাছায় মহামারী করোনাভাইরাসের এই দূর্যোগময় সময়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন অলংকার তৈরীর কাজে নিয়োজিত কারিগররা। প্রায় দুই মাস যাবত কোন কাজ নেই, ব্যবসা বন্ধ, কারখানা খোলা হয়না এই অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে এক ধরনের হতাশার মধ্যে দিন যাচ্ছে তাদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সব পরিবার যদি কোন সহায়তা না পাই তাহলে করুন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন অনেকে।

যশোরের চৌগাছা ব্যবসা বান্ধব উপজেলা হিসাবে ইতি মধ্যে সারা জেলায় আলোচনায় এসেছে। দেশ স্বাধীনের পর এখানে হাতে গোনা কয়েকটি স্বর্ণের দোকান ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাজারের পরিধি বেড়েছে, আর বেড়েছে স্বর্ণের দোকানও।

আরো পড়ুন :
রায়পুরে অসহায় দুস্থদের মাঝে বিএনপি’র ত্রাণ বিতরণ
করোনা : গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ৬৩৬, মৃত্যু ৮ ও সুস্থ হয়েছেন ৩১৩ জন
মাগুরায় বরো ধান সংগ্রহে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন

চৌগাছা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাতে শতাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী আছেন। আর এই সব স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কারখানায় ২শ’র মত কারিগর কাজ করেন। বছরের অন্য সময়ে আলংকার তৈরীর কাজে নিয়োজিত কারিগররা প্রতিদিন যা রোজগার করেছে তাতেই চলছে ওদের সংসার। কিন্তু গত দুই মাস ধরে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে সারা দেশের মত সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার সকল জুয়েলারী দোকান বন্ধ, কাজ হয়না কোন কারখানায়। খেয়ে না খেয়ে অনেক কারিগর দিন পার করছেন।

অলংকার কারখানায় কর্মরত কারিগর বাবলুর রহমান, পূর্ণ বিশ্বাস, পবিত্র কুমার বিশ্বাস, ইকবাল হোসেন, স্বপন কুমার বিশ্বাস, শুনিল কুমার, সাধন কুমার, রমেশ চন্দ্র, প্রভাষ কুমার, গৌতম কুমারসহ একাধিক কারিগর জানান, গত দুই মাস পরিবার পরিজন নিয়ে কি ভাবে বেঁচে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। বলাচলে আমরা দিন আনা দিন খাওয়াদের মধ্যে অন্যতম। যে দিন কাজ হয় সেদিন ভাল চলে আর কাজ না হলে চলে না।

করোনা ভাইরাসের আগে প্রতিদিন ৫শ’ হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করে অনেক কারিগর বাড়িতে ফিরেছে। হঠাৎ করে এই ভাইরাসের কারনে প্রায় ২ মাস ধরে কাজ বন্ধ। মালিকরা তাদের ব্যবসা বন্ধ রেখেছে, কারখানাও বন্ধ। এই অবস্থায় ২শ কারিগরের সাথে সম্পৃক্ত অন্তত ৬শ ব্যক্তি অর্ধহারে অনাহারে দিন পার করছেন। আমরা কারো কাছে পারছি না সাহায্যের জন্য হাত পাততে কিংবা লাইনে দাঁড়াতে। বর্তমান অবস্থা যদি আরও কিছুদিন বলবত থাকে তাহলে কি ভাবে দিনগুলো পার করবো তা ভেবে পারছিনা। কারিগররা জানান, গত দুই মাসের মধ্যে দোকান মালিকরা দুইবার খাদ্য সামগ্রী দিয়েছে, কিন্তু তাতে কয়দিন চলে ? মালিকদের দেয়া সাহায্য ছাড়া আর কোন সাহায্য পাইনি।

শ্রী দূর্গা জুয়েলার্সের মালিক রতম কুমার দে জানান, কেন্দ্রীয় জুয়েলারী সমিতির নির্দেশ মোতাবেক আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। নির্দেশ পেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। এই দুই মাসে কারিগরসহ বেশ কিছু ব্যবসায়ী এমনকি দোকানের কর্মচারীরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা যতটুকু পেরেছি তাদের পাশে দঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।

উপজেলা জুয়েলারী সমিতির সভাপতি অনন্ত কুমর বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে সব কিছ্ইু এলোমেলো হয়ে গেছে। আমার কারিগরসহ বেশ কিছু স্বর্ণব্যবসায়ী এই দূর্যোগকালীন সময়ে অনেক কষ্টে আছেন। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু সময়টি দীর্ঘ হওয়ায় সেই দাঁড়ানোও এখন যেন আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুতই জুয়েলারী সমিতির নেতবৃন্দ উপজেলা প্রশাসনের সাথে বসবেন বলে তিনি জানান।

মে ০৯, ২০২০ at ১৬:৪৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমই/এএডি