নোম্যানস ল্যান্ডে থেকে উদ্ধার সেই নারীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের ফেনী নদীর মাঝামাঝি নোম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান এবং অমানবিক জীবনযাপন করা থেকে উদ্ধার মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শাহনাজ পারভিনকে কুড়িগ্রামে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শাহনাজ পারভিন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দইখাওয়ারচরের হাতেম আলী শেখের মেয়ে।

মঙ্গলবার (৫ মে) সন্ধ্যায় উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরের উপস্থিতিতে শাহনাজ পারভিনকে তার বড় ভাই উমর আলীর কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) প্রতিনিধি দল।

বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় নোম্যানস ল্যান্ডে পড়ে থাকা সেই নারীকে।
তার বক্তব্যের ভিত্তিতে বিজিবি তার পরিচয় শনাক্তের কাজ শুরু করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রসের (আইসিআরসি) ও বিডিআরসিএসের নজরে আসে। পরে বিজিবি- আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস যৌথভাবে কাজ করে উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই নারীর নাম পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে শাহনাজ ঢাকায় মিরপুরে দিনমজুরের কাজ করতে যায়। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় শাহনাজ। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজ খবর করলেও তার কোনও সন্ধান পায়নি তারা।

বিজিবির বরাত দিয়ে বিডিআরসিএস প্রতিনিধি দল জানায়, গত ২ এপ্রিল সকালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুশ-ইনের চেষ্টা রুখে দেয় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপর থেকে ওই নারী বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর মাঝখানে নোম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছিলেন। ওই এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা এক নারী তাকে খাবার দিতেন। অসংলগ্ন কথাবার্তার মাঝে ওই নারী নিজ মুখে তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার দইখাওয়ারচরে বলে দাবি করেন।

বিডিআরসিএসের ফিল্ড অফিসার মাহবুবুল হক জানান, আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আমরা শাহনাজ পারভিনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। উদ্ধারের পর তার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সে করোনা নেগেটিভ। তবে মানসিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ।

তিনি আরো বলেন, শাহনাজ পারভিনের বড় ভাই উমর আলী ফোনে আইসিআরসির কাছে তার বোনের চিকিৎসায় সহায়তার আবেদন করেছেন। শাহনাজের চিকিৎসার বিষয়টি আইসিআরসি বিবেচনা করতে পারে।

শাহানাজ পারভিনের বড় ভাই উমর আলী হারিয়ে যাওয়া বোনকে ফিরে পেয়ে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক চিকিৎসার পর শাহনাজ সুস্থ হয়েছিল। আবারও সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। সরকার যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো, তাইলে আমার বোনটা আবার সুস্থ হতো।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, আমরা আইসিআরসি ও বিডিআরসিএসের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাহনাজ পারভিনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মে ০৬, ২০২০ at ০৯:৩৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসই/এএডি