ইস্যুর এক বছরেও ভিজিডি কার্ড পাননি নিলুফা, পাত্তা দেননি ইউএনও

স্বামী পরিত্যক্তা নিলুফা ইয়াসমিনের নামে এক বছর আগে ইস্যু হয়েছে ভিজিডি কার্ড। সেই কার্ড বুঝে নিতে বারবার চেয়ারম্যানের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো ফল হয়নি। পরে এ ব্যাপারে ইউএনওর দ্বারস্থ হন নিলুফা। কিন্তু ইউএনও তাকে পাত্তাই দেননি বলে অভিযোগ নিলুফা ইয়াসমিনের। ঘটনাটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৈরাগীর চর গ্রামের আবু আব্দুল্লাহ মোল্লার মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা লিলুফা ইয়াসমিনের নামে গত বছরের ১১ মার্চ মাসিক ৩০ কেজি খাদ্যশস্যের ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা হয়। কার্ডটির নম্বর ০২। কিন্তু ইস্যু হওয়ার এক বছর অতিবাহিত হলেও তাকে সেই কার্ড বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী নিলুফা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, তার নামে ইস্যু হওয়া ভিজিডি কার্ডে চেয়ারম্যান শাহ আলম নিজের লোককে দিয়ে চাল উত্তোলন করে আসছেন।কার্ড নেয়ার জন্য গত এক বছরে অসংখ্যবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান তাকে অপমানজনক কথাবার্তা বলে তাড়িয়ে দেন।

পরে নিলুফা ইয়াসমিন এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের কাছে অভিযোগ নিয়ে যান। তবে ইউএনও তাকে পাত্তাই দেননি, দেখিয়ে দেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে। এরপর গেল বছরের ২১ জুলাই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নিলুফা ইয়াসমিন।

সে সময়ই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার নিলুফার কার্ড বুঝিয়ে দিতে চেয়ারম্যানকে তাগিদ দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান শাহ আলম তার কথা কানে তোলেননি, উল্টো অশোভন ব্যবহার করেছেন। এরই মধ্যে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার বদলি হয়ে যান।

এদিকে দুই মাস আগে দৌলতপুরে যোগ দেয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহানের কাছে রোববার (৩ মে) আবারো একটি অভিযোগ দেন নাজেহালের শিকার নিলুফা। কিন্তু অভিযোগ পেয়ে তিনি ইউএনওর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান নিলুফাকে বলেন, এসব বিষয়ে ইউএনও স্যার আইনি ব্যবস্থা নেন। আমার যেটা করার করবো।

এর আগে রোববার দুপুরের দিকে নিলুফা ইউএনওর দফতরে গেলে ইউএনও শারমিন আক্তার তাকে যথারীতি আগের মতোই পাত্তা না দিয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে পাঠান। দুই কর্মকর্তার ঠেলাঠেলি আর চেয়ারম্যানের বাড়াবাড়িতে নিজের নামের কার্ড না পেয়ে এই করোনা পরিস্থিতিতে নিদারুণ দিন কাটছে অসহায় নিলুফার।

ইতোমধ্যে নানা অনিয়মে অভিযুক্ত হয়ে পড়া মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম এই অভিযোগ অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে বলেন, এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। এ ধরনের কোনো অনিয়ম আমার ইউনিয়নে ঘটেনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলো মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দেখার কথা। তার সাথে কথা বলতে বলেন ইউএনও।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। বিষয়টি তদন্ত করে নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই কমিটির সভাপতি। তিনিই আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ দেয়া ৯ মাস অতিবাহিত হলেও কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন? এমন প্রশ্নের জবাবে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, আমি মাত্র দুই মাস আগে এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আগের কর্মকর্তা এবং ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।

এ উপজেলার সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুবিনা আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নিলুফা একজন স্বামী নিগৃহীত নারী। তার নামে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ভিজিডি কার্ড ইস্যু হলেও তিনি কার্ড পাননি মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমকে লিখিতভাবে তার কার্ডটি দিয়ে দেয়ার জন্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান কার্ড দেয়ার পরিবর্তে আমাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। বিষয়টি তখন নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ওঠা সরকারি বরাদ্দে ব্যাপক নয়ছয়ের অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক খবর আসছে। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি