সড়ক দুর্ঘটনায় জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষী নিহত, ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষী, পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম খলিল (৩০) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতে কর্মস্থল থেকে তিনি মোটরসাইকেলে করে শহরতলীর ত্রিমোহনী যাওয়ার পথে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের জুগিয়া কানাবিল মোড় এলাকায় এ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন। ফেসবুকে উঠে এসেছে আবেগঘন স্ট্যাটাস।
নিহত পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম খলিল মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে। এক পুত্রসন্তানের জনক ইব্রাহিম কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার এই আচমকা মৃত্যুতে জেলা প্রশাসন পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম খলিল সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার কর্মস্থল থেকে মোটরসাইকেলে করে শহরতলীর ত্রিমোহনীর দিকে যাচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের জুগিয়া কানাবিল মোড়ের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় ঘাতক পিকআপ ভ্যানটি দ্রুত পালিয়ে যায়। চালক ও হেলপারকে আটকের চেষ্টা চলছে।

আরো পড়ুন :
কৃষকদের ধান কাটায় সহায়তা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ জাপা চেয়ারম্যানের
প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
করোনা সন্দেহে একজনের মৃত্যু

এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ইব্রাহিম খলিলের মরদেহ নেয়া হয়। এ সময় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে পুলিশ লাইনের মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এসএম তানভীর অারাফাত, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৃনাল কান্তি দে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী ও কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলুসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিক এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মরদেহ পাঠিয়ে দেয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।

রাত সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন এক শোকবার্তায় বলেন, ইব্রাহিম খলিল চাকরি জীবনে একজন কর্তব্যপরায়ণ, সৎ, দক্ষ, অমায়িক ও আকর্ষণীয় গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে সকলের প্রিয়ভাজন ছিলেন। আমরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি এবং পরম করুণাময়ের কাছে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

নিহত ইব্রাহিম খলিল কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের কাছেও অত্যন্ত পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে সাংবাদিকমহলে শোকাচ্ছন্ন আবহ দেখা গেছে। সাংবাদিকদের অনেকে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি লিটনউজ্জামান নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘পুলিশ লাইনে তোমার জানাজা শেষে বাসায় ফেরার মত শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। গতকাল ডিসি সাহেবের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমার সাথে কত কথা, আর আজ শুধু তোমার সেই চিরচেনা মুখটি চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। আজ তুমি নাই। তোমার আদরের একমাত্র ছোট্ট বাবুটা আর তোমার বাবা-মা কি করে সইবে এই শোক। রাব্বুল আলামীন তোমাকে জান্নাতবাসী করুন।’

সমকথা সম্পাদক সাংবাদিক কাজী সাইফুল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জেলা প্রশাসনের কোনো প্রোগ্রামে গেলে জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষী হওয়ার কারণে ইব্রাহিম খলিলের সাথে প্রায়ই দেখা হতো। খুবই চেনা মুখ চেনা মানুষ, সেদিনই দেখা হলো। সদা হাস্যোজ্জল বিনয়ী। ভালো মানুষ ছিলো ছেলেটি।’

দৈনিক সংবাদের জেলা প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান লাকী নিজের ওয়ালে লেখেন, ‘কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের নির্বাহী পর্ষদের সভার দিন মরহুম ইব্রাহিমের ফোন আসতো “লাকী ভাই স্যারকে (জেলা প্রশাসক মহোদয়) নিয়ে রওনা হলাম আপনারা রেডিতো?” এ ফোনটি আর আসবেনা আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করুন।’

এপ্রিল ২১, ২০২০ at ০৫:২৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর/এএডি