ক্ষুব্ধ ইউএনওর মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সহয়তার জন্য দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ও কার্যক্রমে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় জনমনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের বিগত সময়ের কর্মকাণ্ড এবং করোনা ইস্যুতে তার নেতৃত্বে চলা কার্যক্রম নিয়ে হতাশা ও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপজেলাবাসী।
এ উপজেলার মানুষের হতাশা, অসন্তোষ, করোনা পরিস্থিতি এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে লেখেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। এ কারণে এখানকার মূলধারার সাংবাদিকদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হন ইউএনও। এর জেরে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ‘দৌলতপুরে কুচক্রি মহল প্রশাসনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে’ -এমন শিরোনামে গোঁজামিলমার্কা খবর বের হয় স্থানীয় একটি দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে।
যেখানে ইউএনও শারমিন আক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে তার বক্তব্য প্রকাশ পায়। করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনের সকল কার্যক্রম ঠিক ছিলো দাবি করে ইউএনও বলেন, ‘কুচক্রি মহল আমাদের কাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তাই আমরা সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারছি না।’ এই বক্তব্যকে ইউএনওর অসহায়ত্ব ও ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
কীভাবে ইউএনও শারমিন আক্তার করোনা প্রতিরোধে ঠিক কাজ করছেন? কোন কুচক্রি মহল তাকে আইন প্রয়োগে বাধা দিতে সক্ষম হলো? কীভাবেই বা কুচক্র সংঘটিত হলো? সম্প্রীতির দৌলতপুরে কোন চক্রটি করোনার মতো ইস্যুতে প্রশাসনের মিথ্যা সমালোচনা করার ধৃষ্টতা পেল? এসব প্রশ্ন এখন এখানকার সাংবাদিকদের মনে।
করোনা ইস্যুতে উপজেলার গণমানুষকে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সুরাহার দাবি জানিয়ে নাগরিক মন্তব্য যখন কুচক্রি মহলে পরিণত, তখন দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীদের কাছে ভাইরাসের ভয়াবহতা আরো শঙ্কার, -এমনটাই মনে করছেন এখানকার সচেতন মহল।
সম্প্রতি ইউএনও নিজে এবং তার সাথে থাকা ব্যক্তিরা মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচি পরিচালনায় মাঠে নামেন। তবে মাস্ক পরা অবস্থায় যুবককে পেটানো, কান ধরে ওঠবস করানো, প্রশাসনের কেউ নন এমন লাঠিয়াল সাথে রাখা, জনসমাগম এড়ানোর অভিযানে গিয়ে জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষের মোটরসাইকেলের কাগজ চেক করা, তাও আবার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে। এ রকমের নানা অসঙ্গতি ছাড়াও বেআইনিভাবে সাধারণ মানুষকে নিজ মুখে মারার হুকুম দেয়া, দোকান ভেঙে দেয়া ও করোনা প্রতিরোধে অবহেলামূলক প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইউএনও শারমিন আক্তার।
ইউএনওর সেই অভিযানের মিনিট খানিকের একটি ভিডিও ক্লিপ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও ক্লিপ নিয়েও মানুষের বিরুপ মন্তব্যের শেষ নেই। এতে ফের ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন তিনি। একের পর এক মানুষের বাজে ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে মাথা বিগড়ে যায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত ইউএনওর। বদলি আদেশের পর তাকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। ধারণা করা হচ্ছে, বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে অবশেষে দৌলতপুরের সচেতন মহলকেই কুচক্রি মহল হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে করোনাকালেও টিসিবির পণ্য দুর্নীতির সুরাহা করেননি। ফলে এখানকার অভিযুক্ত টিসিবি ডিলার আবারো ভোক্তাদের ফাঁকি দিয়ে দোকানদারদের কাছে পণ্য সরবরাহ শুরু করেছেন। নানা কারণে আলোচিত হয়ে ওঠা এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও অবহেলার সুস্পষ্ট প্রমাণ রেখে চলেছেন।