৪৯ লিটার দুধ দিয়ে পরিষ্কার করা হলো আ.লীগ কার্যালয়

যশোরের কেশবপুরে আওয়ামী লীগের কয়েকটি কার্যালয় দখলমুক্ত করে তা দুধ দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পৃথকভাবে এ অভিযান চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ।

পুলিশ জানায়, এর আগে এসব কার্যালয় থেকে ধারালো অস্ত্র এবং ফেনসিডিলের খালি বোতল উদ্ধার করা হয়। যশোর-৬ কেশবপুর আসনের প্রয়াত এমপি ইসমাত আরা সাদেক সমর্থিতদের দখলে ছিল বিভিন্ন ইউনিয়নের ৬টি কার্যালয়। দখলমুক্ত করে সেগুলো ধুতে ৪৯ লিটার গরুর দুধ ব্যবহার করা হয়েছে। একটি কার্যালয় থেকে ধারালো অস্ত্র এবং ফেনসিডিলের খালি বোতলও উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচে কৃষক লীগের কার্যালয় ২০১৪ সালে হাতুড়ি ও গামছা বাহিনী দখলে নেয়। এরপর উপজেলার মাছের ঘের দখল, মাদক ব্যবসা ও সেবন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, বাজার লুটসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখান থেকে পরিচালিত হয়। তাদের অত্যাচারে আতঙ্কে থাকতেন কেশবপুরবাসী।

উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া ইকবাল বলেন, ‘সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএইচএসকে সাদেকের স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ২০১৪ সালে কেশবপুর আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও হন। তার ছত্রছায়ায় থাকা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী ‘হাতুড়ি ও গামছা বাহিনী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচে কৃষকলীগের অফিসটি দখলে নিয়ে মাছের ঘের দখল, মাদক ব্যবসা ও সেবন, চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। গত ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে কেশবপুর আসনটি শূন্য হয়। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী করায় গা ঢাকা দেয় হাতুড়ি ও গামছা বাহিনীর সদস্যরা।’
আরও পড়ুন: চসিকে ডা. শাহাদাতই বিএনপি’র একক প্রার্থী

হাতুড়ি বাহিনীর অফিস থেকে দেশীয় অস্ত্র ও ফেনসিডিল উদ্ধাররাবেয়া ইকবাল আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে দখলে থাকা কক্ষটি খুলে পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ ওই কক্ষটি থেকে ওই বাহিনীর ব্যবহৃত দুটি ধারালো দা, চারটি তলোয়ার, ১টি কিরিচ ও ফেনসিডিলের ৭টি বোতল উদ্ধার করে। পরে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ গরুর দুধ দিয়ে কক্ষটি ধুয়ে মুছে ফেলে। এরপর তাদের দখলে থাকা গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভেরচিবাজার, পাঁজিয়া ইউনিয়নের গড়ভাঙ্গা, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা, সুফলাকাটি ইউনিয়ন ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ভান্ডারখোলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখলমুক্ত করে গরুর দুধ দিয়ে ধুয়ে পুতঃপবিত্র করা হয়।’ ৬টি কার্যালয় ধুতে ৪৯ লিটার দুধ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

রাবেয়া ইকবাল বলেন, ‘উপজেলা কৃষকলীগের যে অফিসটি দখলমুক্ত করে দুধ দিয়ে ধোয়া হয়েছে সেটি আজ থেকে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিন বলেন, ‘২০১৬ সালে সন্ত্রাসীরা উপজেলা কৃষকলীগের অফিসটি দখল করে। সেই থেকে ওই ঘরটি তাদের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। মঙ্গলবার কার্যালয়টি উদ্ধারের পর সেখানে অস্ত্র দেখতে পাওয়া যায়। এরপর পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় দলীয় কার্যালয়গুলো থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অপসারণ করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী। যে কারণে আবেগের বশবর্তী হয়ে নেতাকর্মীরা কার্যালয়গুলো দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলেছে।’

কেশবপুর থানার ওসি মো:আবু সাঈদ বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে খবর পেয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঘরের সানশেডের ওপর থেকে দুটি রামদাসহ কয়েকটি ধারালো অস্ত্র ও ফেনসিডিলের খালি বোতল উদ্ধার করা হয়।’ ওই সব কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দেশদর্পণ/এসজে