অবশেষে কৃষকের লাশ ফেরত দিল বিএসএফ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কৃষক সোলাইমান মোল্লার (৪৮) লাশ অবশেষে ফেরত দেয়া হয়েছে। ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ার চার দিনের মাথায় সোমাবার বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফের তত্ত্বাবধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কৃষক সোলাইমান মোল্লার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের উচ্চপর্যায়ে কয়েক দফা চিঠি আদান-প্রদানের পর পতাকা বৈঠকে বসতে সম্মত হয় বিএসএফ।

সেই মোতাবেক সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ৮৪/২ (এস) সীমানা পিলার সংলগ্ন ডিগ্রির চর নামক স্থানে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনস্ত চিলমারী ক্যাম্পের কমান্ডার গোলাম কাওসার এবং বিএসএফের পক্ষে ১৪১ কমান্ডেন্টের অধিনস্ত ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার চরভদ্রা ক্যাম্পের কমান্ডার এসি বলবীর সিং নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে অজ্ঞাত ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মারা যাওয়ার চার দিনের মাথায় সোলাইমান মোল্লার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। দৌলতপুর থানার ওসি এসএম আরিফুর রহমান সেখানে উপস্থিত থেকে লাশ গ্রহণ করেন। এ সময় ভারতীয় পুলিশের পক্ষে জলঙ্গী থানার এসআই আমজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। পতাকা বৈঠকের সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ ভূখণ্ডে সতর্কাবস্থায় ছিলেন।

এদিকে পতাকা বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই পুলিশের সাময়িক প্রক্রিয়া শেষে নিহত সোলাইমান মোল্লার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ওসি এসএম আরিফুর রহমান। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তার লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছিল।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মরার চর গ্রামের সোলাইমান মোল্লা, ছলিমের চর গ্রামের গাজিউর, রুবেল ও সাহাবুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন কৃষক সীমান্তের ১৫৭/২ (এস) সীমানা পিলার সংলগ্ন স্থানে নিজেদের আবাদ করা সরিষা কাটতে যান। সে সময় ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি থানার মুরাদপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করলে কৃষক সোলাইমান মোল্লা পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তার সঙ্গে থাকা অন্য কৃষকরা প্রাণ বাঁচাতে কোনোমতে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন।

পরে বিএসএফ সদস্যরা গুলিবিদ্ধ সোলাইমান মোল্লাকে টেনেহিঁচড়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যান। তাকে ভারতের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার তিনদিন পর তিনি মারা যান। নিহত সোলাইমান মোল্লা এ উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের মরার চর গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে। তিনি তিন সন্তানের জনক ছিলেন।

দেশদর্পণ/এসআরএস/এসজে