মাদক ব্যবসায়ীদের মাঝে ফিরে আসতে মরিয়া এসআই বশির

রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার সাবেক এসআই এসআই বশির বর্তমান পোস্টিং রাঙ্গামাটি সাজেক থানায়। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা, সহযোগীতা ও মাসোহারা আদায়ের অভিযোগে ২০১৮ সালের জানুয়ারী ও ফেব্রæয়ারী মাসে রাজশাহীর একাধিক স্থানীয় পত্রিকা ও একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয় এসআই বশিরের বিরুদ্ধে।

নড়ে চড়ে বসেন পুলিশের উদ্ধতন কতৃপক্ষ। শুরু হয় তদন্ত কার্যক্রম। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী মহানগরীতে থেকে বদলি করা হয় তাকে।

সম্প্রতী তিনি আবারো মতিহার থানার এলাকার মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। বলছেন শিঘ্রই আমি আরএমপি ডিবিতে জয়েন্ট করবো। আমার সাথে যারা যোগাযোগ রাখবে না তাদের ব্যবস্থা আগে নিবো।

এ নিয়ে মতিহার থানা পুলিশের মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোপ ও গুঞ্জন।  জানা যায়, এসআই বশির বিভিন্ন মামলায় স্বাক্ষি দিতে রাঙ্গামাটি সাজেক থানা থেকে রাজশাহীতে আসেন । থাকেন মতিহার থানাধিন বাজে কাজলা বৌ-বাজার এলাকায় নূরুলের বাড়িতে। যে কয়দিন রাজশাহীতে অবস্থান করেন। সন্ধার পর মোটরসাইকেল নিয়ে গভির রাত পর্যন্ত মাদক এলাকাগুলোর বিভিন্ন স্পটে গিয়ে যোগাযোগ করেন মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে।
আরও পড়ুন: জ্ঞানপাপীরা জয় বাংলা স্লোগানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে: যশোরে স্বপন ভট্টচার্য্য

অভিযোগ উঠেছে, নগরীর মতিহার থানাধিন জাহাজঘাট, মহব্বতের ঘাট, সাতবাড়িয়া, ডাসমারী স্কুল মোড়, মালেকের মোড়, করিডোর মোড়, মিজানের মোড়, শ্যামপুর বালুঘাট এলাকা মাদক অধ্যষিত এলাকা। আর এ সকল এলাকাতেই ছিলো এসআই বশিরের একক রাজত্ব।

রাজশাহীতে এসে এসআই বশির ওই সকল এলাকাগুলোর মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আজ আবদি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তার রাজশাহীতে ওঠাবসা ও চলাফেরা মাদক ব্যবসায়ীদের সাথেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সকল এলাকার একাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলেন, এসআই বশির এখনো পূর্বের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। অনেকে বলে বিখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মিজানের মোড়ের আক্কাসের ভাই বলে আখ্যা দেন স্থানীয়রা এসআই বশির। তার বাড়িতে তার বৌ-বাচ্চা নিয়ে যাতায়াতও রয়েছে তার।

এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারী) দুপুরে চর-শ্যামপুর মিজানের মোড় এলাকার নাজমুল ও সুন্দরি নামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দাওয়াত খেয়েছেন ওই এসআই।

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জাহাজঘাট এলাকার ডাক্তার ইকবালের র্ফামেসির পাশে বসে কয়েকজনের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় ৯৯৯-এ কল দিয়ে এসআই বশিরের কর্মকান্ডের বিষয়ে অবগত করেন স্থানীয়রা। পরে জাতীয় সেবা কেন্দ্র ৯৯৯ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মতিহার থানাকে দায়িত্ব দেয় হয়।

রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহাজঘাট এলাকায় মতিহার থানার পিএসআই ফারুক ও সঙ্গীয় ফোর্স তাকে ধরতে অভিযান চালায় জাহাজ ঘাট এলাকায়। ততক্ষনে তিনি খবর পেয়ে জাহাজ ঘাট থেকে সটকে পড়েন।

ওই সময় জাহাজঘাট মোড়ের অর্ধশতাধিক সাধারন জনতা জড়ো হয়ে এসআই বশিরের মাদক এলাকাগুলোতে যাতায়াতের বিষয়টি ওই পিএসআইকে অবগত করেন।
আরও পড়ুন: তিন দফা দাবি: বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ জানায়, এসআই বশিরের ভয়ে আমাদের যে সকল সোর্স ছিল তারা আমাদের আর তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছে না।

বলছে, বশির ডিবিতে আসলে আমাদের সমস্যা করবে। তাহলে মাদক ও মাদক ব্যবসায়ী আটক করবো কি ভাবে ? এমন বক্তব্য পুলিশেরও। স্বাক্ষি দিতে আসলে মাদক অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে রাতের আধারে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা ও গোপন মিটিং করেন এসআই বশির।

এ বিষয়ে আরএমপি’র মূখপাত্র অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ রুহুল কুদ্দুসকে অবগত করলে তিনি বলেন, উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনকে অবগত করলে তিনি বলেন, স্বাক্ষির নামে অতিরিক্ত ছুটি যাতে না কাটাতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, মতিহার থানায় কন্সটেবল হিসেবে গত অনুমানিক ১৭-১৮ বছর পূর্বে যোগদান করেন এসআই বশির। পরে এ থানাতেই এএসআই ও পরে এসআই হিসেবে মতিহার থানায় দির্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে মাধ্যে কোন কোন থানায় পোস্টিং হলেও ডিউটি বাদে চলাফেরা ও ওঠা বসা মতিহার থানার মাদক এলাকাগুলোতেই করতেন তিনি। আর ৩ থেকে ৬ মাস না যেতেই আবার পোস্টিং নিয়ে চলে আসেন মতিহার থানায়। শুরু হয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে দেন দরবার।

এছাড়াও মতিহার থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটকের বিষয়ে একাধিক এসআই, এএসআইদের সাথে রয়েছে তার দ্বন্দ। মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট মাসোহারা আদায় আর সহযোগীতা এসআই বশিরের মূল আয়ের উৎস।

দেশদর্পণ/এমআরআর/এসজে