মাসুদ রানা রাব্বানী: রাজশাহীর পুঠিয়ায় মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এবারো খাদ্য গুদাম কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকের ধান ক্রয়ে জটিলতা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে লটারীর মাধ্যমে প্রকৃত কৃষক নির্বাচনে চরম ব্যর্থতাসহ নানা বির্তক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় চাষিরা বলছেন, আমাদের উৎপাদিত ধান নয়, তাদের কাছে কৃষিকার্ডের চাহিদা বেশী। অপরদিকে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজসে ব্যবসায়ীরা অতিনিন্মমানের ধান করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কর্মসূচি হিসেবে চলতি বোরো মৌসুমে ধান ক্রয় করতে নিদের্শ দিয়েছেন সরকার। সে লক্ষে এই উপজেলায় প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬২৮ মে.টন ধান ক্রয়ের নিদের্শনা এসেছে। সে মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন, কৃষি ও খাদ্য বিভাগ ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সকল কৃষকদের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে ৬২৮ জন কৃষকের তালিকা প্রকাশ করেছেন।
খাদ্য গুদাম ওই তালিকা অনুসারে গত ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান ক্রয় শুরু করেছেন। আর ক্রয় কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: পারিবারিক রহস্যের জালে বন্দি শিশু তোফাজ্জল হত্যা, তদন্তে পুলিশ সুপার
শিলমাড়িয়া এলাকার কৃষক তাহের আলী বলেন, বর্তমানে হাট-বাজারে একমণ ধানের মূল্যে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। আর সরকার কিনছেন প্রতিমণ ১ হাজার ৪০ টাকা দরে। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা কৃষকের মুনাফা লুটপাট করতে কৃষকের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে অনেকেই প্রকৃত কৃষক নয়। ওই নেতাদের তদবিরে তার নাম অন্তভ‚ক্ত করা হয়েছে। এখন ওই কার্ডে নেতারা বাজার থেকে নিন্মমানের ধান কিনে তা সরবরাহ করছে। আবার কার্ডধারী কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধানের নমুনা আনলে সে গুলো সরবরাহের উপযুক্ত নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এ কারনে অনেক কৃষক ওই কৃষিকার্ড সিন্ডিকেট চক্রের কাছে বিক্রি করছেন।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিলিটি) জালাল উদ্দীন সিন্ডিকেট চত্রের সাথে যোগসাজসের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস ও খাদ্য ক্রয় কমিটি দেয়া তালিকা অনুসারে আমরা কৃষি কার্ড দেখে ধান কিনছি। এ যাবত পর্যন্ত ১২০ মে.টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন চাষীর নামে দেয়া ধানে কিছুটা জটিলতা ছিল পরে তা সমাধান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবশেষে গ্রেফতার ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত সেই দুই ভাই
তবে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, একজন কার্ডধারী কৃষক একটন ধান আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। আবার খাদ্যক্রয়ে গুনগত মান সম্পন্ন ধান না হলে আমরা নিচ্ছি না। সেক্ষেত্রে কোনো কৃষক তাদের কৃষিকার্ড বিক্রি করছেন কিনা সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে আমরা লোকমূখে শুনেছি প্রতিটি কার্ড ২ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৩০ ডিম্বেবর ৫০ বস্তা ধান ক্রয়ে কিছুটা জটিলতার দেখা দিয়েছিল। পরে নির্বাহী কর্মকর্তা সে গুলো জব্দ করেছিল। আমি ওসিলিটিকে বলে দিয়েছি কোনো প্রকার অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি ওলিউজ্জামান বলেন, প্রকৃত কৃষক ছাড়া ব্যবসায়ীদের ধান ক্রয় না করতে নিদের্শনা দেয়া আছে। খাদ্য গুদামে সরবরাহকৃত নিন্মমানের জব্দকৃত ধানের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার পর এ ঘটনার সাথে জতিদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশদর্পণ/এমআরআর/এসজে