অবশেষে গ্রেফতার ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত সেই দুই ভাই

দেশে ক্যাসিনো কারবার চালুর পেছনের হোতা তারা দুই ভাই। নেপালিদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম নিয়ে আসেন তারা। তারপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই কারবারে দুই ভাই রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে ওঠেন। গত বছরের শেষ দিকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ক্ষমতাসীন বলয়ে থাকা অনেক রাঘব-বোয়াল ধরা পড়লেও তারা দুই ভাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তাদের ধরা পড়তেই হলো।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে তাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে আটকা পড়লেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া।

এ দুইজনকে নিয়ে দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ।

সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া অভিযানে ক্যাসিনোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও অর্থ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে যে নয়টি মামলা হয়, সেগুলো তদন্তের ভার সিআইডির কাছে আসে। নয়টির মধ্যে চারটি মামলার এজাহারেই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার নাম দেখা যায়। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করি এবং সকালে কেরানীগঞ্জে তাদের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: ঘাটলায় উঠার সিঁড়ি থাকলেও নেই নামার ব্যবস্থা

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিআইডির তদন্তে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাইয়ের সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। এছাড়া সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও রয়েছে দুই ভাইয়ের। সেপ্টেম্বরে দু’জনের বাড়িতে অভিযানের সময় ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো ব্ল্যাকমানি (কালো টাকা)। দেশের বাইরে পাচার করতে তারা সেগুলো রেখেছিলেন।

রিমান্ডে নিয়ে দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করেন ইমতিয়াজ আহমেদ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, তারা তা আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- নৌযানে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাবেন। তবে ওই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দু’জন নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করেন। সেখান থেকে বেনামী পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন দুই ভাই। বেনামী পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সাথে রেখেছিলেন তারা। তাদের গ্রেফতারের সময় এই ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

দেশদর্পণ/এসজে