ফরিদপুরের জয়িতা নারী উদ্যোক্তা সাবিনা

ফরিদপুরে শ্রেষ্ঠ জেলা ও উপজেলা জয়িতা নিবাচিত হয়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফনগর (সালামতপুর) গ্রামের অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী সফল নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন।

দেশ ব্যাপি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ নির্বাচিত করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ৯ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী সফল নারী উদ্যোক্তা জেলার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ জয়িতা সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ক্রেষ্ট ও সনদ তুলে দেন । অপর দিকে সন্ধ্যায় উপজেলা শ্রেষ্ঠ জয়িতার ক্রেষ্ট ও সনদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা মনোয়ার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া খাতুন।

যে ভাবে শুন্য থেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা থেকে জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হলেন অর্থিৈনক সাফল্য অর্জনকারী জেলার ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা।

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের নারী সমাজের দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংগ্রহনকারী বাংলার অগণিত নারী তাদের অসামান্য অবদান, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ স্বাধীন করেছেন।

তেমনি একনারী ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের প্রত্যান্ত অঞ্চলের বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আব্দুর রউফের গ্রামের সফল নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন।
১৯৮৫ মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা কাজুলী গ্রামের মৃত ইউনুস আহম্মেদ ও মমতাজ বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৯৫ সালে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রউফনগর গ্রামের মো.হামিদুর রহমান চুন্নুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধহন।

জীবনযাত্রার ভবিষ্যৎ নিয়ে ছোট বেলা চিন্তিত না হলেও নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তা নিয়ে স্কুল জীবনেই কাজ শুরু করেন সাবিনা। অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করার সময় উপবৃত্তির পাওয়া টাকা দিয়ে হাঁস,মুরগি ক্রয় করে পালন শুরু করেন তিনি। কি কারনে যেন তাকে পশু পালনই সর্বৎকৃষ্ট মনে হয়। এসএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায় ,কিন্তু সংসার জীবন তার জন্য কোন বাঁধাই হয়নি। কারন বিয়ে হবার পর এইচএসসি, অনার্স,মাষ্টার্স করেছেন। বিবাহের পর শশুর বাড়ি এলাকা মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সালামতপুর গ্রামে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে চার একর জমির উপর ঘর তুলে শুরু করেছেন আলিফ এ্যগ্রাবেজ কোং লিঃ এর আওতায় আলিফ গোট এন্ড ডেইরি ফার্ম। যেখানে জন্মেছিলেন অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ সে গ্রামেই ৩৪ টি ছাগল নিয়ে শুরু করা এ খামারে বর্তমানে ১ শত ৫০ টি ছাগল, ১৮ টি অষ্ট্রেলিয়ান গাভী, ১৮ টি বাছুর, ১৪ টি ষাঁড় রয়েছে।

এ ছাড়া খামারের এক অংশে রয়েছেটার্কি, হাঁস,মুরগি। ১৮ টি গাভী প্রতিদিনি যে দুধ দেয় তা বিক্রি করা হয়। ছাগলের দুধ বিক্রি করা হয় ৪শ থেকে ৫ শ টাকা দরে লিটার। খামারের বাইরে রয়েছে ৬ একর ঘাসের খামার। সবকিছুই যেন পরিকল্পিত,সাজানো। দেখতে খুবই সুন্দর। ছাগলের জাঁতের মধ্যে রয়েছে যমুনা পাড়ী, ব্লাক বেঙ্গল ও ব্রাউন বেঙ্গল। তিনি জানান বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি টাকা ইনভেষ্ট রয়েছে এখানে। এ অগ্রযাত্রায় তিনি কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা পায়নি। কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এম.ডি) হিসেবে তিনি নিজেই দায়িত্ব পালন করছেন। সাথে রয়েছেন স্বামী মো. হামিদুর রহমান (চুন্ন) মিয়া।সকল কাজেই সহযোগিতা করেন স্ত্রীকে। তাঁর এ খামার নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। কিভাবে আরও বড় পরিসর করা যায় সে জন্য ইতিমধ্যে সরকারী সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ব্যাংক ঋণের আশা করছেন।

তিনি দাবি করেন, এখন এটি তাঁর আর নিজের ভাবেন না কারন এখানে প্রায় ৭/৮ জন জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন ভাতাদি দিয়ে আসছেন । এটিকে তিনি দেশের সম্পদ বলে দাবি করেন। কারন তিনি এখান হতে মাংশসহ যে সকল উপকরণ সরবরাহ করে থাকে তা দিয়ে তো দেশের কিছু চাহিদা পূরন হয়। সৃজনশীলতা, আত্ম বিশ্বাস আর নিষ্ঠাই সে এগিয়েছে। কথার মাঝে তিনি বলেন, নারীকে পিছিয়ে রাখার কোন সুযোগ নাই। ইচ্ছাই মানুষকে তার লক্ষে পৌঁছে দেয় যদি সে ইচ্ছা পূরনে দৃঢ় মনোবল থাকে আর থাকে সু-পরিকল্পনা। দেশের উন্নয়ন করতে হলে অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদেকে কর্মদক্ষতায় গড়ে তুলতে হবে।

কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, এ খামারটি করাতে এলাকার কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবকিছু মিলে একটা ইতিবাচক বিষয় কাজ করছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পৃথ্বিজ কুমার দাস বলেন, ওখানে একাধিকবার গিয়েছি। সরকারী সকল সহযোগিতা দেওয়া হয়। যেকোন প্রয়োজনে খামারটিকে সহযোগিতা করা হবে।

এ সাফল্যের পাশাপাশি তার পারিবারিক জীবনেও এসেছে সাফল্য। একমাত্র কণ্যাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন কানাডা মেনিটোরা ইউনিভার্সিটিতে। সবকিছু গুছিয়ে সাবিনা এখন একজন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী নারী।