সমাজসেবা অফিসে দুর্নীতির আখড়া, কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি প্রায় তিন বছর আগে এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

‌দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসায় দুর্নীতিগ্রস্তদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। দুস্থদের কাছ থেকেও তারা সম্পূর্ণ অমানবিকভাবে চালিয়ে আসছেন ঘুষ বাণিজ্য। কিছুতেই তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার সময় ভাতা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। ‌

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। এর ধারাবাহিকতায় সানোয়ার হোসেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেছে আরো বহুগুণ। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ওই অফিসের সহকারী মশিউর রহমান। ‌

প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়ার সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জনপ্রতি ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করছেন বলে বহু অভিযোগ রয়েছে।‌

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, টাকা উত্তোলনের আগেই ভাতার কার্ড গ্রহণের সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ৫শ টাকা করে ঘুষ না দিলে তিনি কিছুতেই কার্ড দিতে চান না। শুধু তাই নয়, এসব কার্ডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পর সমাজসেবা কর্মকর্তা তার নিযুক্ত দালালের মাধ্যমে আরো ৫শ টাকা করে ঘুষ আদায় করে আসছেন। ‌

আরো পড়ুন:
হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ২৭ নভেম্বর, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার
নগরবাসী সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠলে নিরাপদ নগর উপহার দিতে পারব : চসিক মেয়র

সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী মশিউর রহমান এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে‌ কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করে আসছেন।‌ বিনিময়ে তিনিও‌ পেয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট অংকের কমিশন।

এসব ভাতার কার্ড গ্রহীতারা সবাই গরিব ও দুস্থ প্রকৃতির মানুষ। তাদের কাছে টাকা না থাকলেও তারা ধার করে সমাজসেবা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের বায়না মেটাতে বাধ্য হন। সমাজসেবা অফিসের এই অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি সম্পূর্ণ ওপেন সিক্রেট। কোনো রকম রাখঢাক বাদেই প্রকাশ্যে সেখানে এসব ঘুষবাণিজ্য চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ‌

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন নিজের বিরুদ্ধের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পর্কে আংশিক সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা কার্ড করে দেয়ায়, বিনিময়ে কার্ড গ্রহণকারীরা মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমার অফিস কর্মচারীদের কিছু দিয়ে থাকেন। ‌এ সময় তিনি উল্টো দাবি করে বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর থেকে এ অফিসের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইওএনও) শারমিন আক্তারের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এর আগেও আমি একাধিকবার শুনেছি। ‌সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি ওই দপ্তরে এসব অনিয়ম দুর্নীতি চলে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‌

নভেম্বর ২৬, ২০১৯ at ২৩:৩২:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসআরএস/এএএম