ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি রোগির মৃত্যু ডাঃ সুমনুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জে ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি রোগির মৃত্যুর ঘটনায় কামারখন্দ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ এসএম সুমনুল হক সজীবকে প্রধান আসামী করে তিন জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে।
ভূল চিকিৎসায় রোগি মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার (২২অক্টোবর) মৃত প্রসূতির স্বামী মনিরুল ইসলাম মোকাম-বিজ্ঞ সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলী আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামীরা হলেন, কামারখন্দ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ এসএম সুমনুল হক সজীব (৪০) ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. ফিরোজ (৩৮) ও ম্যানেজার মো. ফরিদুল ইসলাম (৩৫)।
সুত্রে জানাযায়, সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ এসএম সুমনুল হক সজীবের বেপরোয়া ও ভূল চিকিৎসায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করার ১৫ দিন পর রাশিদা বেগম (৩০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ঐ প্রসূতি সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পঞ্চসোনা গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী। ভুল অপারেশনের কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন মৃতের স্বামী মনিরুল ইসলাম।
রাশিদা বেগমকে সদর উপজেলার কড্ডার মোড়ে ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিকে তার সিজার অপারেশন করেন ডাঃ এসএম সমনুল হক সজীব।
চিকিৎসার সময় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অপারেশনে চিকিৎসকের ত্রুটির কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ডাঃ এসএম সুমনুল হক সজীবের বিরুদ্ধে। কামারখন্দ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের চিকিৎসক হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক ও বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে সময় দেওয়া ও নিয়মিত রোগি দেখা এবং অপারেশন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মৃত রাশিদা বেগমের ভাই হারিজ আলী শেখ জানান, ৫ অক্টোবর প্রসব ব্যাথা শুরু হলে রাশিদাকে সদর উপজেলার কড্ডার মোড় এলাকায় ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে সিজার অপারেশন করেন কামারখন্দ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমনুল হক সজীব। অপারেশনের পর নবজাতক সুস্থ থাকলেও প্রসূতি ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকে। চিকিৎসক তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বগুড়া শজিমেকের আইসিইউতে ৬ দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ও পরে লালমাটিয়ায় রয়েল হাসপাতাল এবং সবশেষে মিরপুরের ডেলটা হাসপাতলে নেওয়া হয়। এসব হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীকে ফিরিয়ে দিলে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তিন দিন থাকার পর রোববার (২০অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে
 রাশিদার মৃত্যু হয়।
মৃত রাশিদা বেগমের ভাই হাফিজুল শেখ, বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসরা আমার বোনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়েছেন, অপারেশনের সময় অতিরিক্ত স্থান এবং কিডনির একটি শিরা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে রোগী মারা গেছে।
আরো পড়ুন:

রাশিদা বেগমের স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সরকারী হাসপাতালে ডাঃ সুমনুল হক সজীবের ভূল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আদালতে এঘটনায় আজ মামলা করেছি। এখন ডাক্তারের দ্রুত গ্রেফতার কামনা করে ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,
 সিরাজগঞ্জ সদরে ডা. এমএম সমনুল হক সজীব অনুমোদন না নিয়েই লাইসেন্স বিহীন ভাবে তার স্ত্রী ডাঃ মোমেনা পারভীন (পারুল)কে দিয়ে নিউ এ্যাপোলো হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল অব্যবস্থপনায় পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. এমএম সুমনুল হক সজীবের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করে তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন সাংবাদিক, আমার অনলাইন সাংবাদিকতার প্রেজেন্টেশন আছে, এটা আপনি জানেন? যারা জানার তারা ঠিকই জানে। এঘটনায় আপনাদের কি সাক্ষাৎ দিবো। সাক্ষাৎ নিতে হলে সাংবাদিকদের সোসাইটির সদস্য হতে হবে।
এ ব্যাপারে কামারখন্দ স্বাস্থ্য ও উপজেলা প:প: কর্মকর্তা ডাঃ মো. ফারুক আহমেদ বলেন, প্রসূতী মৃত্যুুর ঘটনা পত্রিকায় দেখেছি। এব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী সিভিল সার্জন অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ডাঃ সমনুল হক সজীবের বিরুদ্ধে ভূল চিকিৎসায় রোগি মারা যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই সাথে নিউ এ্যাপোলো হাসপাতাল লাইসেন্স বিহীন ভাবে চললে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অক্টোবর ২১, ২০১৯ at ১১:০৮:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/দেপ্র/তআ