গরীবের টাকায় ইউএনও’র থাবা, গৃহনির্মাণ বন্ধ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গৃহহীনদের বাসগৃহ নির্মানের টাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের বিপরিতে বিধি অনুযায়ী যৌথ স্বাক্ষরের ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও ইউএনও সাইফুল ইসলাম অসৎ উদ্দেশ্যে অগ্রণী ব্যাংক, কবিরপুর বাজার, শৈলকুপা শাখায় একক নামে ২০০০১৬৭৯ নং নতুন একটি একাউন্ট খুলে টাকা রেখেছেন বলে জানা গেছে।

সে অভিযোগের ভিত্তিতে বন্ধ রয়েছে গৃহহীনদের বাসগৃহ প্রকল্পের কাজ। ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত সরকারি টাকা ইউএনও’র একক নামে প্রবেশ করার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ উজ-জামান।
ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শুরু হওয়া গৃহনির্মানের কাজ সাময়িক বন্ধের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যথাস্থানে পৌছে যাওয়া নির্মাণ সামগ্রি।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৮ মে ১৯ তারিখে জেলা ত্রাণ শাখার ৫১.০১.৪৪০০.০২৩.১৬.০৪১.১৯-১৯ নং স্মারকের আদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্প আসে। প্রকল্পের আওতায় শৈলকুপায় ৩৩ টি ঘর নির্মানের বরাদ্দ হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৫২৩ টাকা।

তৎকালীন ইউএনও উসমান গনি ব্যাপক খোঁজ খবর নিয়ে প্রকৃত গৃহহীনদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন ও প্রাথমিক অনুমোদন করান। সে মোতাবেক পরবর্তিতে উপজেলা কমিটির পাঠানো নামের তালিকা ১ আগষ্ট ২০১৯ জেলা প্রশাসক অনুমোদন দেন। দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ম অনুযায়ী পিআইও এবং ইউএনও’র যৌথ স্বাক্ষরিত অগ্রণী ব্যাংক কবিরপুর শাখায় ১৫৫৯ নং একাউন্টে গচ্ছিত রাখা হয়।

আরও পড়ুন :
ফেনসিডিলসহ নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক ১
শিশু ধর্ষণের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন

ইউএনও সাইফুল ইসলাম ৩৩ টির মধ্যে ৩০টি ঘরের পিআইসিদের নামে ২ লাখ টাকা করে পিআইও আব্দুর রহমানের নিকট থেকে চেক ইস্যু করিয়ে নেন। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯ তারিখের চেক নং ০৭২১৩০১ থেকে ক্রমানুসারে ০৭২১৩১৪ পর্যন্ত এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯ তারিখের চেক নং ০৭২১৩১৫ থেকে ০৭২১৩৩০ পর্যন্ত মোট ৩০টি চেক ইস্যু হয়।

পরে নিজের অফিসে ডেকে সুবিধামত সময়ে চেক রিসিভে বেশকিছু পিআইসিদের স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করেন ইউএনও। চেক ৩০টির বিপরিতে ৬০ লাখ টাকা ইউএনও’র একক একাউন্ট নম্বরে জমা করেন যা বিধি বহির্ভূত।

১নং ত্রিবেনী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য উক্ত কাজের পিআইসি আব্দুল করিম জানান, নির্মাণ কাজের স্বচ্ছতা রাখতে তিনি নিজের মত করে সব দেখভাল করবেন বলে পিআইসিদের নিকট থেকে নানামুখি চাপ প্রয়োগ করে চেক রিসিভে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য কাজের বিষয়ে তিনি কিছুটা আর্থিক সুবিধা দেবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।

৭নং হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জিকু জানান, সুভংকরের ফাঁকির মত কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কিছু ইউনিয়নের পিআইসিদের ইউএনও অফিসে ডেকে চেক রিসিভে স্বাক্ষর করে নিয়েছেন। একই মতামত দিয়েছেন একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইউনিয়নের পিআইসগণ। পিআইসিদের অভিযোগ, ইউএনও ব্যক্তিস্বার্থে ও টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে নিজের মনপুর্ন লোক দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।

তিনি বরাদ্দকৃত ৩৩টি ঘরের বিপরীতে ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৫২৩ টাকার মধ্যে ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজের একাউন্টে রাখার ব্যাপক পায়তাড়া চালিয়েছেন নোটসীট দেখলেই অভিযোগের সত্যতা মিলবে। এ ঘটনায় পিআইসিসহ অন্যান্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, পরে মৌখিকভাবে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তারা অবহিত করেন।

পিআইও এসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২ অক্টোবর ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ উজ-জামান শৈলকুপায় এসে উক্ত প্রকল্পের দুইটি ফাইল জব্দ করে জেলায় নিয়ে যান। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনও সাইফুল ইসলাম ফাইল ফিরে পেয়ে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে ফাইল থেকে মুল নোটসিট বের করে তা ছিড়ে ফেলে। একই সাথে নিজের মনগড়া আরেকটি নতুন নোটসিট তৈরী করে পিআইও আবদুর রহমানকে দিয়ে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে তা ফাইলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে পূর্বের নোটসিটের সাথে নতুন নোটসিটের অনেকাংশেই গড়মিল রয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাসগৃহ নির্মানের ঘটনা জানাজানি হলে পিআইও আবদুর রহমানের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অন্য প্রকল্পের বিষয়ে অবৈধভাবে একটি শোকোজ নোটিশ করেছেন ইউএনও।

সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত হলে ইউএনও’র অনিয়ম ও দূর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিকট বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আরিফ উজ-জামান জানান, সরকারি খাতের টাকা যৌথ একাউন্টে থাকার কথা। এই প্রকল্পের টাকা শৈলকুপা ইউএনও’র একক নামের একাউন্টে জমা রাখাসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অক্টোবর ১৫, ২০১৯ at ১৬:৩৩:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমএস/আজা