কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের বাড়িতে শোকের মাতম

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় তার কুষ্টিয়ার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন আববারের মা রোকেয়া খাতুন। আবরার হত্যার ঘটনায় শোকাহত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসীও। তারা কোনোভাবেই এই বর্বর হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে পারছেন না। কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে আবরারের বাসাজুড়ে স্বজনদের আহাজারি কিছুতেই থামছে না।

সোমবার সকালে বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে সেখানকার মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত হওয়ার আগের দিন সকালে তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফেরেন। তিনি বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আবরার ফাহাদের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়ি কুষ্টিয়ায় শোকের ছাড়া নেমে আসে।

আবরারদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। সপ্তাহ খানেক আগে ছুটিতে বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। তবে বাড়িতে এসে পড়ালেখা ঠিক মতো না হওয়ায় ১০ দিন আগেই ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আবরার ফাহাদ। রোববার সকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

সকালে আবরারের মা ঘুম থেকে তাকে ডেকে তুলে দেন। এরপর ঢাকায় পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে চার বার কথা বলেন তিনি। আবরার হলে পৌঁছে বিকেলের দিকে মাকে ফোন দিয়ে ভালভাবে পৌঁছনোর বিষয়টি জানান। মোবাইলে এটিই ছিল মায়ের সাথে আবরারের শেষ কথা। পরে সারারাত ফোন দিয়েও ছেলের কোনো খবর না পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন মা রোকেয়া খাতুন। সকালে উঠে খবর পান ছেলে আর বেঁচে নেই।

আরও পড়ুন:
সুনামগঞ্জ সীমান্তের দুই ইয়াবা কারবারি আটক
বিদেশি মদসহ চোরাই কয়লার চালান জব্দ

ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বলছেন, ‘আমার বেটার মতো বেটা কয়জনের ঘরে আছে রে, আমার মতো সোনার বেটা কয়জনেরে আল্লাহ দেয় রে। আমার মতো সুখি কোনো মা নাইরে।’ তার মায়ের আর্তনাদ উপস্থিত সবার চোখের পানি ঝরাচ্ছে।

দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ ছিলেন বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা বরকতুল্লাহ একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা। মা স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

প্রতিবেশিরা জানান, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাবের। সবার সাথে তার সদ্ভাব ছিল। তার অমায়িক ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করতো। তিনি নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তেন। খুব বড় ধরনের কারণ ছাড়া নামাজের জামাত এড়াতেন না।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ ছেলের মরদেহ আনার জন্য ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন। মরদেহ কুষ্টিয়া আনার পর মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়ি কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায় তাকে নেয়া হবে এবং সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে ছাত্রশিবির কর্মী দাবি করে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা প্রচার করা হলেও তার বাবা বরকতুল্লাহ ও চার চাচা আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

অক্টোবর ৮, ২০১৯ at ০০:৫০:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসআরএস/এএএম