কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সওজের একটি সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রতিবাদ জানানোয় কয়েক ঘণ্টা স্থগিত রাখার পর পুনরায় সিডিউলবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহার করে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় উপজেলার সেন্টার মোড় থেকে মথরাপুর পর্যন্ত ১৮ ফুট প্রশস্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩১ কোটি টাকা।
ঝিনাইদহের মাসুদুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের কাজটি পায়। ইতোমধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কের অর্ধেকের বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও তা খুব একটা মানসস্মত হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সম্প্রতি সড়ক নির্মাণে অনিয়ম করায় সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ জানান। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতার চাপের মুখে নির্মাণ কাজ সাময়িক স্থগিত রাখতে বাধ্য হন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। তবে ঠিকাদারের আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ লোকজন সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার মাথায় পুনরায় সড়কটি নির্মাণে অনিয়ম করা হয়।
সড়ক নির্মাণ কাজে এক নম্বর ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের ইট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাথরের পরিমানও তুলনামূলক অনেক কম দেয়া হচ্ছে বলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক ঠিকাদার মাসুদুর রহমান অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
ঠিকাদার মাসুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সড়ক নির্মাণে যেই অনিয়মের অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। সিডিউল অনুসারে সমস্ত কাজ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী নিয়মিত তদারকি করে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। উপজেলার হোসেনাবাদের রাজু আহমেদ ওই কাজের জন্য ইট ও বালু সরবরাহ করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে নিম্নমানের ইট সরবরাহ করার কথা স্বীকার করে রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পরবর্তীতে আর এ ধরনের ইট ব্যবহার করা হবে না। তিনি ভালো মানের ইট ও বালু দিয়ে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ওইদিন জনরোষের কবলে পড়ে সাময়িক বন্ধ রাখার পর আবারো নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার করে সড়কটির নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর প্রতিবাদে এলাকার লোকজন নতুন করে ফুঁসে উঠেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এই অনিয়ম রোধ ও সিডিউল অনুযায়ী টেকসই সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে পার্শ্ববর্তী ইনসান মোড়ের বাবুল মাল নামে এক যুবক অনিয়মের অভিযোগে সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানালে ইট ও বালু সরবরাহকারী রাজু আহমেদ তাকে চাঁদাবাজ উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন বলে বাবুল মাল জানান।
পরে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ঠিকাদার মাসুদুর রহমানের অন্যতম সহযোগী এলাকার প্রভাবশালী রাজু আহমেদ স্থানীয় সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সারওয়ার জাহান বাদশাহসহ সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার নাম ভাঙিয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজে অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এই অনিয়মের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে মঙ্গলবার বিকালে মোবাইল ফোনে জানান, সওজের সড়ক নির্মাণ কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। সিডিউল মেনে সঠিকভাবে কাজ করা হচ্ছে। এসব না বুঝে এলাকার লোকজন অযথাই বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯ at ২০:৪০:২৯ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এসআরসে/এএএম