চুরি করার প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে বখাটে ফরিদকে জবাই করে তারই দুই সহযোগি

যশোরের অভয়নগর উপজেলার পল্লীতে সরিষাক্ষেতে জবাই করে হত্যার শিকার ফরিদ গাজী (২৬) হত্যার রহস্য ১২ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করেছে অভয়নগর থানা পুলিশ। রোববার বিকেলে লাশ উদ্ধারের পর থেকে ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচনে মাঠে নামে ডিবি, পিবিআই ও অভয়নগর থানা পুলিশ।

পরে গতকাল সোমবার দুপুরে অভয়নগর থানা পুলিশ, ডিবি ও পিবিআইয়ের সমন্বয়ে নওয়াপাড়া নর্থ বেঙ্গল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত ২ যুবককে গ্রেফতার পূর্বক তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করে। পরে গতকাল সোমবার বিকাল ৫ টায় অভয়নগর থানা চত্তরে প্রেস ব্রিফিং করেন যশোর খ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মুকিত সরকার। আটককৃতরা হলো নড়াইল সদর উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের সাখাওয়াত মোল্যার ছেলে শান্ত (২১) ও একই গ্রামের ছবুর মোল্যার ছেলে সাকিব মোল্যা (২১)।

আরো পড়ুন:
> প্রশ্নফাঁসে ১০ বছরের সাজার বিধান রেখে আইন পাস
> ঝিনাইদহে সিটিজেন ফোরামের উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ

আটক শান্ত ও সাকিবের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে প্রেস ব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, নিহত ফরিদ গাজী মাদকাসক্ত ও বখাটে ছিলো। এলাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে চুরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নিহত ফরিদের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষন মামলাসহ বেশ কয়েকটি চুরি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি জেল হাজতে যায় ফরিদ গাজী। সেখানে আটককৃত দুই যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। পরে জামিনে বের হয়ে ফরিদের ডাকে ওই দুই যুবক কাজের সন্ধানে অভয়নগরে আসে।

এবং নওয়াপাড়ার নর্থ বেঙ্গল এলাকায় এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। গত ২২ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে তারা এলাকায় জাহাজের স্কট হিসেবে কাজে নিয়োজিত হয়। স্কট থেকে ফিরে অবসর দিনগুলোতে নিহত ফরিদ সিছকা চুরি করতো। স্কট থেকে আয়ের টাকা না দিয়ে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া বাবদ কেটে নিতো ফরিদ। পরে সেই টাকা চাইতে গেলে উল্টো ফরিদ তাদের উপর চড়াও হয় এবং ফরিদেও দেয়া শীতবস্ত্র পরিধান করায় সেটার ভাড়া বাবদ প্রতিদিন ২শ’ টাকা দাবি করে।

একপর্যায়ে শান্ত ও সাকিব অতিষ্ট হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এবং পরিকল্পনা মোতাবেক স্যালো মেশিন চুরি করার প্রলোভন দিয়ে তাকে নওয়াপাড়া ভৈরব ব্রিজ সংলগ্ন দেয়াপাড়া গ্রামের একটি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে ফরিদকে চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে শান্ত ও সাকিব। পুলিশ আটককৃতদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক নওয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের ওয়ালের পাশে পুতে রাখা হত্যাকাজে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার করে। এদিকে গতকাল সোমবার সকালে নিহত ফরিদ গাজীর ভাই ফারুক গাজী বাদি হয়ে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ১৩। তাং- ১৬-০১-২০২৩ ইং।

এদিকে নিহত ফরিদের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নিঃস্ব ও অসহায় পরিবারের সন্তান ফরিদ। ফরিদের বাবা মৃত- আফিল উদ্দিন শেখ গত প্রায় ১৫ বছর আগে জীবিকার তাগিদে তিন শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খুলনার কয়রা থেকে নওয়াপাড়ায় এসে রেলবস্তিতে বসবাস শুরু করে। এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবারের ভরন পোষন করতো। গত ৫ বছর আগে তিনি মারা যান। ছোট বেলা থেকেই বখে যায় ফরিদ। হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত।

ছিচকা চুরি করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার উত্তম-মাধ্যমেরও শিকার হয়েছে সে। ফরিদের অসহায় মা ঘাট কুঁড়িয়ে জীবন চালান। ফরিদ প্রায়ই নেশার টাকার জন্য মাকেও মারপিট করতো। নিহত ফরিদের মা জানান, গত ৫/৬ দিন আগে জাহাজে স্কটে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। শনিবার দুপুরে সে বাড়ি ফিরে টাকা চায়। এসময় অতিষ্ঠ হয়ে তার মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরদিন সন্ধ্যার পর জানতে পারেন তার ছেলে খুন হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে ভৈরব নদের সেতু সংলগ্ন দক্ষিণ দেয়াপাড়া এলাকায় সরিষাক্ষেতে ফরিদের গলাকাটা লাশটি পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ at ১৯:৩৬:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/ইমস