তফসিল ঘোষণার আগে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠে মণিরামপুরের প্রার্থীরা

যশোরের মনিরামপুর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এখনও না হলেও, পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দোয়া প্রার্থণা করে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী পোস্টার, বিলবোর্ড সেটেছেন পাড়া মহল্লার রাস্তার মোড়ে মোড়ে। ভোটারদের আর্শিবাদ নিতেই সকাল সন্ধ্যা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। আগাম ভাবেই ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

এবার মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চারজনকে আপাতত মাঠে ময়দানে দেখা মিলছে। দীর্ঘ ২৩ বছরের পৌর এলাকায় কে কি উন্নয়ন করেছেন তার হিসাব-নিকেশ কষতে শুরু করেছেন ভোটাররা। অতি সম্প্রতি মণিরামপুর পৌরসভাটি এখন প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পেলেও পৌর এলাকায় ঢুকলে যেন মনেই হবে না এটা পৌর এলাকা। কাঙ্খিত নাগরিক সুবিধা নেই, কেবল মাত্র ভোটরদের ঘাড়ে চাঁপানো হয়েছে করের বোঝা। এ কারণে কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে জনগণের উন্নয়ন হবে, জনগণ পৌরসভার কাছ থেকে নাগরিক সুবিধা পাবে এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ভোটারদের ইচ্ছা যোগ্য ব্যক্তিকেই পৌর অভিভাবক নির্বাচিত করা হবে। পৌর এলাকায় নেই কোনো কাঙ্খিত ড্রেনের ব্যবস্থা, যেখানে সেখানে ময়লা আর্বজনার স্তুুপ রয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তা ঘাটের দুরাবস্থাও কাটেনি এখনো।

১৯৯৭ সালে স্থাপিত হয় পৌরসভাটি। বর্তমান মেয়াদে প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৩বছরের মধ্যে মেয়র হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পালন করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলু, থানা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. শহীদ মো: ইকবাল হোসেন এবং বর্তমানে দায়িত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব কাজী মাহমুদুল হাসান।

আসছে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে অংশ নিতে আপাতত মাঠে ময়দানে রয়েছে সম্ভাব্য চার প্রার্থী। বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান তিনি আবারও দলীয় টিকিটেই মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে দলীয় নীতি নির্ধারকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও ভোটারদের সাথে মতবিনিময় করে চলেছেন। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বসে নেই শহীদ ইকবালও। থানা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. শহীদ মো: ইকবাল হোসেন বেশ জোরেসরেই নির্বাচনী কার্যক্রম করছেন। নিয়মিত ৯টি ওয়ার্ডে ভোটারদের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি ২০০৪ এবং ২০১০ সালে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। এরমধ্যেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবার তিনি আগে ভাগেই জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কোনো না কোনো ওয়ার্ডের জনগণের সঙ্গে থাকছেন। তবে বিএনপির সমর্থিত ভোটার এবং প্রার্থীদের মুখে আগেই প্রশ্ন আসছে নির্বাচন নিয়ে।

সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর প্যানেল মেয়র-১ কামরুজ্জামান কামরুল। আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন এমন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম গোলাম মোস্তফার জ্যৈষ্ঠ পুত্র এ কামরুজ্জামান মোহন ওয়ার্ড থেকে দু’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। বর্তমানে তিনি পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে দায়িত্বে আছেন। সদালাপী এই নেতা দু’বার কাউন্সিলর হিসেবে তার ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন তিনি। তার ওয়ার্ডে রাস্তা-ঘাট, পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় প্রার্থী হতে তিনি দলের মনোনয়ন পেতেও চেষ্টা করে চলেছেন।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড প্ররিক্রমা ছাড়াও পৌর এলাকায় ভোটারদের উদ্দেশ্যে দোয়া প্রার্থনা করে পোস্টার, বিলবোর্ড সেটেছেন। তিনি আশাবাদী দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটেই নির্বাচিত হতে পারবেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ছুটছেন পৌর এলাকার ভোটার দ্বারে দ্বারে।

দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টাও চালাচ্ছেন নীতিনির্ধারকদের কাছে। হাকোবা গ্রামের মরহুম গোলাম নবীর ছেলে এই আসাদুজ্জামান আসাদ ঠিকাদারী ব্যবসা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসার সাথে যুক্ত তিনি। এর মাঝেও হাল ছাড়েননি রাজনীতিতে। ছয় বছর তিনি যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পরিচালক পদে নির্বাচিত হন। তিনবার পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিও ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ৮৮ সালে মণিরামপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৯০’ এ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৯৪’তে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ৯৭’তে পুনরায় ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত ছিলেন ২০০৪ সালে।

এছাড়াও সম্ভাব্য এই প্রার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবেই মেয়র পদে নির্বাচন করতে পারবেন এমন আশার কথা শুনিয়েছে। তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভোটারদের মাঝে হাজির হয়ে, দোয়া কামনা করছেন।

সম্ভাব্য এই চার প্রার্থীর বাইরেও আরো কয়েক নেতা মেয়র পদে নির্বাচন করবেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন দলীয় মনোনয়ন তিনি পাবেন বলে জোর দাবী করেন। প্রভাষক ফারুক প্রয়াত উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার ছোট ছেলে। বিএনপির মধ্যে থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে মুছা পন্হী একজনকে প্রার্থী করবেন।