চাঁদা না দেওয়ায় শিক্ষককে চেয়ারম্যানপুত্রের মারধর

বরগুনার বেতাগী উপজেলায় চাঁদা না দেওয়ায় মো. আবু জাফর (৪১) নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ওই শিক্ষক বাদী হয়ে বেতাগী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খলিফার ছেলে ও সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম শাহরিয়ার মনি (৩৫) এবং তার অনুসারী মো. শাওনের (৩৩) নামে বেতাগী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আরো পড়ুন :

> বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করবে না চীন: রাষ্ট্রদূত
> কাউনের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

ভুক্তভোগী মো. আবু জাফর বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের আব্দুল হাদির ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

আবু জাফর বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কোনো বরাদ্দ এলে চেয়ারম্যানের ছেলে গোলাম শাহরিয়ার মনিকে টাকা দিতে হয়। আমি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন গোলাম শাহরিয়ার মনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। তখন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের বরাদ্দ থেকে তাকে কয়েকবার টাকা দিতে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হঠাৎ তিনি (গোলাম শাহরিয়ার মনি) বিদ্যালয়ে এসে পুনরায় ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি এ সময় প্রতিবাদ করায় মনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারী দিয়ে প্রথমে আমাকে চড়-থাপ্পড় দেওয়ায়। এরপর বিদ্যালয়ের বাইরে মনি নিজে আমাকে আবার চড়-থাপ্পড় দেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকলেও ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করেননি।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম শাহরিয়ার মনি বলেন, আমি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি। সম্প্রতি কমিটির কাউকে না জানিয়ে এমনকি কোনো র‍েজুলেশন ছাড়াই বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের একটি বরাদ্দ উত্তোলন করেন। আমি ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান শেষে তাদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাই। তখন সহকারী শিক্ষক আবু জাফর আমাকে একটি ভাউচার দেখায়। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক থাকতে তিনি কীভাবে ভাউচার দেখান জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার দিয়ে আমাদেরকে মারতে উদ্যত হন। তখন আমার চাচাতো ভাই এগিয়ে এলে তাকে চড়-থাপ্পড় দেন শিক্ষক আবু জাফর। উনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন তার ভাইকে কমিটির সভাপতি বানাতে চেয়েছিলেন। সেই থেকে আমার সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, সদর ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে গোলাম শাহরিয়ার মনি এলাকায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত। দুই বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খলিফা অতিদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগীর তালিকায় মনির নাম অন্তর্ভুক্ত করে সমালোচিত হন। এছাড়া সদর ইউনিয়নে যেকোনো সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে গেলে চেয়ারম্যানপুত্র মনিকে চাঁদা অথবা কাজের অংশীদার করতে হয়।

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষকের কাছ থেকে লাঞ্ছিত হওয়ার খবর শোনার পর আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। যেহেতু অভিযুক্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ নন তাই ভুক্তভোগীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

বেতাগী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগস্ট ১৬, ২০২৩ at ১৩:৫৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর