২৪ বছরের চিলেকোঠায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সিড়ির এক ধাপ, দুধাপ করে এগিয়ে ২৪ বছরে পা দিলো দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও বরিশালের কীর্তনখোলার ব্যাস্তময় আবহমান গতির মাঝে, দক্ষনবঙ্গের শিক্ষার মানোন্নয়নে বরিশাল শহর থেকে ৩৭ কি. মি. এবং পটুয়াখালী থেকে ১৮ কি.মি. দূরে দুমকি শহরে অবস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০০ সালের ৮ই জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় ৩ টি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও হাটি হাটি পা পা করে এখন ৮ টি অনুষদে ৯টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়।

মূল ক্যাম্পাস ৭৭ একর ও বহিঃস্থ ক্যাম্পাস(বাবুগঞ্জ, বরিশাল) ১২.৯৭ একর সহ মোট ৮৯.৯৭ একরের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ৪১৪৬ জন শিক্ষার্থী, ২৫৩ জন শিক্ষক, ১৮৩ জন কর্মকর্তা, ৫২২ জন কর্মচারী রয়েছেন। বাংলাদেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শতভাগ আবাসন সুবিধা তার মাঝে পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম । এজন্য শিক্ষার্থীদের পাঁচটি ছাত্র হল ও তিনটি ছাত্রী হল রয়েছে। ক্যাম্পাসের ভিতর মনোরম পরিবেশ ও গোছানো। এরই মাঝে নীলকমল, লালকমল ও তরঙ্গতনু নামের তিনটি লেক ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। নীলকমলের উপর রয়েছে সুন্দর একটি সেতু এবং বসার জন্য একটি জায়গা। মনোরম এ দৃশ্য ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন আরো বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশাসনিক ভবন,একাডেমিক ভবন, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, টিএসসি, লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় মসজিদ, হেলথ কেয়ার, জিমনেসিয়ামসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো হাতের মুঠোয় এনে দেওয়াতে শিক্ষার্থীদের বেশ সুবিধা হয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব গেট সংলগ্ন পীরতলা বাজার এর পূর্বে অবস্থিত আরো দুইটি হল এবং বিভিন্ন বিভাগের হাতে কলমের শেখার জন্য উপযোগী করে তোলায় হয়েছে।

আরো পড়ুন :

> পাইকগাছা-তালা সিমান্তে বনায়ন দখল ও কর্তৃত্ব নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি
> কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির আত্মহত্যা!

মেইন ক্যাম্পাসের বাহিরে এবং বরিশাল শহর থেকে ১২ কি.মি. দূরে অবস্থিত বাবুগঞ্জ উপজেলায় বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাস। এ ক্যাম্পাসটি বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজ হিসেবে ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে চালু হলেও পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদভুক্ত হয় ২০০৮ সালে। এ অনুষদে ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) এবং এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী বিষয়ে পাঠদান করা হয়। দুইটি একাডেমিক ভবন, প্রসাসনিক ভবন, একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হল(বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল), অডিটোরিয়ামে, ডরমেটরি, খেলার মাঠ, ভেটেরিনারি ক্লিনিকসহ বেশ কিছু গবেষণারগার রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনোভেশন ডেসিমিনেশন সেন্টার তথা পিআইডিসি। এ প্রকল্পের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকায় কৃষক, মৎসজীবী ও খামারীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দান করছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা। এজন্য তাদের একটি মোবাইল এপস ই-কৃষি যথেষ্ট ভুমিকা পালন করছে। যেখানে রয়েছে কৃষি, মৎস্য চাষ ও পশু পালনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা। যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক কৃষকরা। এ সেন্টারে প্রতি ১-২ মাস পর পর ৩০ জন করে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এটি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

দীর্ঘ ২৩ বছরে পবিপ্রবির বিষদ অর্জন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেভাবে এগিয়ে চলছে, গবেষণাতেও তার প্রমান রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ। পবিপ্রবির শিক্ষা ও গবেষণার জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। এ বছর অ্যালপার ডগার (এডি) সাইন্টিফিক ইনডেক্সে পবিপ্রবির ১১৭ জন গবেষক স্থান পেয়েছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগ দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসল (ভুট্রা, সূর্যমুখী) উৎপাদনের জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। “ফ্ট্রিপ মেথড” নামক এই পদ্ধতির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরণের ফসল সাধারণের চেয়ে ২২-২৫ শতাংশ বেশী উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। যেখানে এ অঞ্চলের জলবায়ুর তারতম্যের কারনে এ ধরণের ফসল একেবারেই উৎপাদন সম্ভব হতো না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের উদ্ভাবিত বায়োচার প্রযুক্তি সারা দেশ ব্যাপি সাড়া ফেলেছে। এর মাধ্যমে নাইট্রোজেন সারের কার্যকরারিতা বাড়িয়ে কৃষিতে উৎপাদন খরচ যেমন কমছে তেমনি পরিবেশও বিরুপ প্রভাব থেকে মুক্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহত্তর জার্মপ্লাজম ইতোমধ্যে সফলতার সাক্ষ্য বহন করছে। জার্মপ্লাজমটি স্থানীয় ফলমূল ও বৃক্ষের জিনগত উন্নতি সাধনে বেশ কয়েকবছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছে। যা পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তনে দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তায় আশানুরূপ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। ইতোমধ্যে এখানে বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চফলনশীল ফলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে পিএসটিইউ বিলাতী গাব-১, পিএসটিইউ বিলাতী গাব-২, পিএসটিইউ ডেউয়া-১, পিএসটিইউ ডেউয়া-২, পিএসটিইউ বাতাবি লেবু-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-২, পিএসটিইউ তেঁতুল-১, পিএসটিইউ বৈচী-১ অন্যতম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে দেশের প্রথম ও একমাত্র জলহস্তী কঙ্কাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগে এটি তৈরী করে। ইতিমধ্যে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর কঙ্কাল সংরক্ষণের কাজ করে যাচ্ছেন।

জুলাই ০৮, ২০২৩ at ১৭:২৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোমেহা/ইর