ফারাক্কার প্রভাবে পানিশূন্য ৪ নদী

শিবগঞ্জের কৃষক তারেক রহমান, মাসুদ রানা, আল আমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, নদী শুকিয়ে গেছে। নদী ও নদীর পাড়ে চাষাবাদ করা ফসলে পানি দিতে হয় শ্যালো মেশিন দিয়ে। কিন্তু গত বছর থেকে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে শ্যালো মেশিন দিয়েও পানি উঠছে না। ফলে আরও গভীরে নলকূপ দিয়ে পানি উঠাতে হচ্ছে।

ষাটোর্ধ্ব আজিজুর রহমান বলেন, নদীর গতিপথ পাল্টে গেছে। আজকে যেই জায়গায় নদী ছিল, একসময় তা ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ছিল। কিন্তু ফারাক্কার কারণে ভারতে পানি বাড়লেই হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ায় পানি স্রোত এসে নদী ভাঙন হয়। এতে করে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

কৃষক আশরাফুল হক জানান, শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা গেইট আটকে দেয়ায় এক ফোঁটাও পানি আসে না। ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়। এখন বাইরে থেকে কেউ এই এলাকায় আসলে দেখে বোঝার উপায় নাই, এটাই সর্বনাশা পদ্মা। যতদূর চোখ যায়, শুধু ধূ-ধূ মরুভূমির বালু।

‘সেভ দ্য ন্যাচার’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান সমন্বয়কারী রবিউল হাসান ডলার জানান, স্থানীয় পরিবেশবাদীদের মতে পদ্মায় পানি না থাকায় পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও জীবনচক্র। বিশেষ করে শুশুক ও ঘড়িয়ালের প্রজননস্থল পদ্মা নদী হওয়ায় এই প্রাণি দুটি হুমকির মুখে পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ভূমি ও পানি সমতলের সর্বনিম্ন স্তরের যে ব্যবধান সেটা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীর পাড়ের যে স্থিতিশীলতা তা হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছরই নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ছেই। পানির যে প্রবাহ সেটার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের সরাসরি সর্ম্পক রয়েছে। গত ২০ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ার কারণে তাপমাত্রা মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে এবং পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

তৎকালীন লংমার্চে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম রেজা বলেন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে সেই ঐতিহাসিক লং মার্চ যথার্থ ছিল। সেইদিন অনেক রাজনীতিবিদই তাকে ঠাট্টার চোখে দেখেছিল। কিন্তু সেই লং মার্চের এতদিন পর আজকে আমরা কী দেখছি? দেখছি, দিন দিন পদ্মার বুকে পানি কমছে। ফারাক্কার প্রভাবে আমাদের দেশের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফারাক্কা বাঁধের সুষম পানি বণ্টনের যে চুক্তি হয়েছিল, সেইদিন তা সঠিকভাবে ব্যবহার হয় নাই বলেই আজকের এই পরিণতি।

মে  ১৬, ২০২৩ at ১৯:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর