জমি লিখে নিতে ব্যর্থ হয়ে সেই ব্যারিস্টার ছেলের দেশ ত্যাগ

ছবি- সংগৃহীত।

বৃদ্ধ বাবা হায়দার আলীকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে দেশ ছেড়েছেন চৌগাছার সেই ব্যারিস্টার মুর্তজা রাসেল। বাবাকে তিনি বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বলে আদালতের কাছ থেকে জিম্মায় নিয়েছিলেন। সেই বাবাকে পারিবারিক শত্রুদের কাছে রেখে সটকে পড়েছেন প্রায় একমাস আগে। বর্তমানে বৃদ্ধ হায়দার আলীর বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে ঠাঁই হয়েছে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তার ছয় সন্তান এবং স্ত্রী থাকলেও বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় কেউ পাশে নেই। যারা রয়েছেন তারা সকলেই তার স্ত্রীর লতিফা হায়দারের দায়ের করা মামলার আসামি। তাদের নামে সম্পত্তি আমমোক্তারনামা করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন ছেলে মর্তুজা।

অন্যদিকে, সবকিছু থেকে বঞ্চিত থেকেও অসুস্থ্য স্বামীকে জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেছেন বৃদ্ধ হায়দার আলীর স্ত্রী লতিফা হায়দার। আগামী ১৮ মে এ আবেদনের শুনানি রয়েছে। মামলা উঠিয়ে নিতে হায়দার আলীর স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের ওপর হামলা চালাচ্ছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এসব বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা। তারা দাবি করছেন, ব্যরিস্টার রাসেলের দেশে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া। তা তিনি করেছেন। এসব ঘটনায় দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে সেই আশঙ্কায় রাসেল তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

ব্যারিস্টারের বৃদ্ধা মা লতিফা হায়দার বলেন,ঈদুল ফিতরের দিন তার স্বামীর সাথে দেখা করার জন্য ছোট ছেলে মুর্তজাকে ফোন করেন। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পান। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ অ্যামবাসিতে তারা যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। পরে জানতে পারেন স্বামীকে তার করা মামলার আসামি বাবুল আক্তারের ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে। বাবুলের ভয়ে তিনি সেখানে যেতে পারেননি। কয়েকদিন দিন আগে লন্ডনে থাকা বড় ছেলের মাধ্যমে জানতে পারেন মুর্তজা রাসেল লন্ডনে ফিরে গেছেন। গত ৮ মে মামলার ধার্য তারিখে আদালতে পুলিশ জানিয়েছে হায়দার আলী চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হায়দার আলীকে আদালতে হাজিরের আবেদন করেছেন। তিনি আরও জানান, গত ২০ এপ্রিল পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন তাকে ও তার ছোট ছেলে ইমরান এবং ব্যারিস্টার ছেলে মুর্তজাকে ডেকে ছিলেন। তারা সবাই সেখানে গিয়েছিলেন। রেশমা শারমিন দু’পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওইসময় মুর্তজা পিবিআই পুলিশ সুপারের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।

বড় বোন বিউটি জানান, মুর্তজার দেশে আসার মুল লক্ষ্য ছিল বাবার সকল সম্পত্তি লিখে নেওয়া। সেটি না পারায় ট্রাস্টের দোহায় দিয়েও চেষ্টা করেছেন। সম্পত্তি লিখে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাবাকে একা ফেলে রেখে দেশ ছেড়েছেন। তিনি আরও বলেন, যাওয়ার আগে সব সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন বাবুল ও তার ছেলে বিশালকে। তারাই এখন সকল সম্পত্তি ভোগদখল করছেন। এরমধ্যে গত ৬ মে সিআইডি অফিস থেকে তাদের পরিবারকে হাজির হতে বলেন। তারা হাজিরও হন। সেখান থেকে ফেরার পথে বাবুল, বিশাল, রাজিব, মজনু, মাসুম, শহিদুল, জাহানারা, মামুন, রশিদ, মিজানুর ও টিটো তাদেরকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। অন্যথায় খুন জখমেরও হুমকি দেন তারা। বাধ্য হয়ে তিনি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে মুর্তজা রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বাবাকে রেখেই লন্ডনে ফিরতে বাধ্য হয়েছি। পাসপোর্ট না থাকায় বাবাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি। তিনি অন্যদের নামে সম্পত্তি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেয়ার কথা স্বীকার করেন।

মে  ১৫, ২০২৩ at ২১:৫৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর