একাডেমিক ভবনে লাগা আগুন নিভিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন যবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থী

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একাডেমিক ভবনে আগুন নিভিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির দুই সংবাদ কর্মী। তারা হলেন- দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শেখ সাদী এবং এশিয়ানটিভি অনলাইনের মোতালেব হোসাইন।

জানা যায়, শনিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে আনুমানিক ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি মেস থেকে একাডেমিক ভবনের নবম তলায় আগুন দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান। আগুন দেখতে পেয়ে সে তার বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মী মোতালেব হোসেন ও শেখ সাদিকে বিষয়টি জানান।খবর পেয়ে তাঁরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে দেখেই আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণ করেন। মিনিট দশেক পরে আগুন নেভাতে সক্ষম হয় সাদি, মোতালেব, নোমান ও তার বন্ধুরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এক্সস্ট ফ্যান থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শেখ সাদি জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং মোতালেব হোসাইন এশিয়ান টিভি অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক। উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য।আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারী এই দুই সাংবাদিক ও আগুন দেখতে পাওয়া শিক্ষার্থীকে রিজেন্ট বোর্ড থেকে ধন্যবাদ সম্মাননা দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

আরো পড়ুন :
> পাবনা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ম্যুরাল উদ্বোধন
> চৌগাছার সফল ফল চাষি রুহুল আমিন দশ কাটা জমি হতে ৪০ মণ আঙ্গুর বিক্রির আশা

প্রথম আগুন দেখতে পাওয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, রাত ১ টার দিকে বেলকুনিতে বসে ফোনে খেলা দেখছিলাম। একাডেমিকের দিক থেকে শব্দ হইলো একটু পর দেখি আগুন জ্বলতেছে। এতো রাতে কি করবো কাকে বলবো ভাবছিলাম। তারপর আমার বন্ধু সাংবাদিক সমিতির মোতালেব হোসেন কে ফোন করে আগুনের কথা বললাম।তারপর দৌড়ে একাডেমিকের দিকে যাই। নিচ তলায় আনসার মামাদের জানাই। মামারা বলেন ওপরে কি হচ্ছে কি করে বলবো? ওনাদের কে ওপরে আসতে বললাম।কিন্তু ওনারা নিচ থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলো।উপায় না পেয়ে দৌড়ে ৯ তলায় গিয়ে দেখি মোতালেব ও শেখ সাদি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। আগুন অনেক ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। ১০-১৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই। তারপর আনসার মামারা ৯ তলায় উপস্থিত হন।

সংবাদকর্মী শেখ সাদি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি ও মোতালেব একাডেমিক ভবনের পাশে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, নবম তলায় আগুন জ্বলছে। লিফট চালু না থাকায় সিঁড়ি বেয়ে দুজনেই দ্রুত ৯ম তলায় উঠি। প্রথমেই আগুন অল্প জায়গায় থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দেখে, উপর থেকে আনসার মামাদের ডাকি। তাদের তড়িৎ সাড়া না পেয়ে, হাঁপিয়ে গেলেও আইসিটি সেলের ক্ষতি হবার আশংকায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। নিজের টি-শার্ট কে মাস্কের মতো ব্যবহার করে আগুন নেভাতে আবারও এগিয়ে যাই এবং আগুন নেভাতে সামর্থ্য হই। মোতালেব ও নোমান যদি পাশে না থাকতো এই কাজ আমার জন্য সহজ হতো না, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের সহযোগিতায় বড় ধরনের ক্ষতি হতে বাঁচাতে পেরেছি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এই ধরনের কাজ করতে পেরে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।

আরেক সংবাদকর্মী মোতালেব হোসাইন জানান, হঠাৎ বন্ধু নোমান ফোন দিয়ে বললো একাডেমিক ভবনে আগুন দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা দেখো তো। তখন সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাদিকে নিয়ে নবম তলায় গিয়ে দেখি আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। দরজার দিকে এগিয়ে আসছে ও জানালার দিক থেকে বাহিরে যাচ্ছে। কেউ নাই ফ্লোরে, কয়েকজনকে ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করিতেছিল না আবার আনসার মামারা আসতে দেরি করতেছিলো, তাই দ্রুত আগুন নিভানোর কাজ শুরু করে দেই। কারণ জানালার বাহিরে আগুন চলে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো, যেহেতু বৈদ্যুতিক আগুন, ছড়িয়ে গেলে তখন নেভানোর জন্য সময় লাগবে ও দ্রুত ছড়িয়ে গেলে আমাদের আর কিছু করার থাকতো না। তাই মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে, ভয়কে সাহসে পরিণত করে আমরা চেষ্টা শুরু করি।

এমন সাহসিকতার জন্য ঐ শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীদের প্রশংসায় ভাসাচ্ছে যবিপ্রবি পরিবার ও যশোরের বিভিন্ন মহল।

মে  ১৩, ২০২৩ at ১৮:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ফহা/মেমহদ