আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে আরতি রাণী

ছবি- সংগৃহীত।
আমার যদি অকাল মৃত্যু হয়, তাহলে এ মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে একমাত্র আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ। সে আমার টাকা পয়সা সব আত্মসাৎ করে আমাকে নিঃস্ব করেছে। এ বিষয়ে ২০১৯ সালে জেলা আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। ওই রিকশা চালকের মতো আমাকেও মারপিট ও গালিগালাজ করেছে।’ কথাগুলো সমালোচিত আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষের সাবেক সহকারী সুখেন বিশ্বাসের। রিকশা চালককে মারপিটকারী আরতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার এসব অভিযোগ করেন সুখেন। অভিযোগ করা হচ্ছে শুধু রিকশাচালক সাইফুল কিংবা সুখেন বিশ্বাসই না, তার এ ধরনের আচরণ থেকে রেহাই পাননি আইনজীবী-মক্কেলরাও।

এদিকে, সমালোচিত আরতি রাণী ঘোষের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত রিকশা চালক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী তোহরা বেগম। কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাইফুল হাসপাতালে ভর্তি থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রী কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রকাশ্যে জুতাপেটা ও মারপিট এবং মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি।

একই ঘটনায় আরতি রাণী ঘোষকে শোকজ করেছে আইনজীবী সমিতি। তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, রিকশা চালককে মারপিটের ঘটনায় মঙ্গলবার শহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে শুধু যশোর না, গোটা দেশবাসী ক্ষুব্ধ। নির্যাতিত সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মঙ্গলবার রিকশা চালক সাইফুলকে অমানবিক এ নির্যাতনের সংবাদে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সমালোচনার ঝড় তোলে। আরতি রাণীর কর্মকান্ডে হতবাক হয়েছেন যশোরের আইন অঙ্গনের ব্যক্তিরা। আরতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এখন সামনে উঠে আসছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সিনিয়র কয়েক আইনজীবীর ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন।

এসব বিষয়ে কথা হয় আরতির সাবেক আইনজীবী সহকারী সুখেন বিশ্বাসের সাথে। তিনি জানান, আরতি রাণী ঘোষের বড় ভাই অ্যাডভোকেট জয়গোপালের সাথে কাজ করতেন।  ২০১৪ সালে ভাইয়ের মৃত্যুর পর ওই সেরেস্তায় যোগ দেন আরতি। এসময় সুখেন ওই সেরেস্তা থেকে বের হতে চাইলে বাধা দেন তিনি। এমনকি তার সকল নথিপত্র আটকে রেখে তাকে জিম্মি করে ফেলেন। প্রতিবাদ করায় তার টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন তিনি। ওই সময় সুখেনের পাওনা অনেক টাকা আত্মসাৎ করেন আরতি। এরমধ্যে ২০১৯ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। তখন পাওনা টাকা চাইলে তার উপর জুলুম করা হয়। তাকে মারপিট করে। বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট তিনি জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতি ও জেলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন। দু’সমিতিতে দেয়া অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আরতি তার ওপর অবিচার করেছেন। তাকে নির্যাতন করেছেন। টাকা আত্মসাৎ করেছেন। লিখিত অভিযোগে সুখেন উল্লেখ করেন, বর্তমানে তিনি  অর্থের অভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছেন না। এইসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তিনি হার্টের রোগী। টাকার অভাবে তিনি ওষুধ পর্যন্ত কিনে খেতে পারছেন না। দুই সমিতিতে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজই হয়নি। উল্টো তার উপর চাপ আসে। বাধ্য হয়ে আরতি রাণীর কাছ থেকে তিনি সরে আসেন। আরতির জন্য তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় তার যদি অকাল মৃত্যু হয় তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবেন আইনজীবী আরতি রাণী ঘোষ।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা ছোট বলেন, আরতিকে শোকজ করা হয়েছে। একই সাথে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে তাকে বরখাস্ত করা হবে।
এদিকে, মারপিটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে যশোর জেলা শ্রমিক লীগ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে রিকশাচালক সাইফুল ইসলামের উপর হামলাকারী আইনজীবী আরতী রাণী ঘোষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এ সময় বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাজী আব্দুস সবুর হেলাল, শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী প্রমুখ।

মে  ১০, ২০২৩ at ১৮:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর